ভয়ানক অস্ত্র বুমেরাং - শত বছরের প্রাচীন যন্ত্র
বিশ্বব্যাপী
আজ অস্ত্রের ঝনঝনানি। বিভিন্ন দেশ ও জাতি সর্বদা ব্যস্ত অস্ত্র তৈরির কাজে। একজন
অপর জন অপেক্ষা বিধ্বংসী অস্ত্র বানানোর নেশায় মত্ত। শুধু এখনকার মানুষরাই অস্ত্র
তৈরি করে তা কিন্তু নয় পূর্বের দিনের মানুষরাও বানাতো অস্ত্র এবং ব্যবহার করতো।
তবে তাদের অস্ত্র হয়তো আমাদের মতো এত ভয়াবহ ছিল না। সেই সময়ের অস্ত্রগুলো তৈরি করা
হতো প্রখর বুদ্ধিমত্তার দ্বারা। যেমন তেমনই একটি অস্ত্র বুমেরাং। এটি প্রাচীন
অস্ট্রেলিয়ার একটি ভয়ানক অস্ত্র। এটি দিয়ে মানুষ বা শক্তিশালী জন্তু-জানোয়ারকে
সহজেই আক্রমণ করা যায়। সুদূর অতীতে দ্বৈরথ যুদ্ধে পদাতিক ও অশ্বারোহী বাহিনীর
প্রধান হাতিয়ার ছিল এই বুমেরাং।
বুমেরাং একটি
সরল মারণাস্ত্রের নাম। এটি প্রথম তৈরি করেছিল আদিম অস্ট্রেলীয়রা। এরপর
অস্ট্রেলীয়দের অনুকরণে ভারতেও এর ব্যবহার শুরু হয়। এশীয় ও মিসরীয় যোদ্ধারা সবসময়
বুমেরাং ব্যবহার করত। প্রাচীন ভারতীয়রা যে বুমেরাং তৈরিতে পারদর্শী ছিল, সেটা জানা যায় তাদের কেন্দ্রীয় বিজ্ঞান জাদুঘরে সুসজ্জিত
অজস্র দেয়ালচিত্র দেখে। তবে একথা সত্যি, সবচেয়ে বেশি
ভয়ঙ্কর ছিল অস্ট্রেলীয় বুমেরাং। এর বৈশিষ্ট্য ছিল তিনটি। যথা: এক, এতে বিমানের প্রপেলারের মতো প্যাঁচ ছিল। দুই, এটি চলার সময় নানারকম পাক খেয়ে এঁকেবেঁকে চলতে পারত। তিন, কোনো কারণে লক্ষ্যভ্রষ্ট হলে বুমেরাং ফের নিক্ষেপকারীর
কাছেই ফিরে আসতে পারত। এটাই ছিল বুমেরাংয়ের সবচেয়ে বড় গুণ।
এ অভিনব অস্ত্রটির নিখুঁত যান্ত্রিক কৌশল বহুকাল ধরে বিজ্ঞানীদের অবাক করে আসছে। অষ্টাদশ শতকের শুরুতে মানুষ যখন বিভিন্ন ধরনের মারণাস্ত্র তৈরিতে ব্যস্ত, ঠিক তখনই বুমেরাংয়ের প্রতি মানুষের কৌতূহল বহুগুণে বেড়ে যায়। এক শৌখিন বিজ্ঞানী ছুটে যান অস্ট্রেলিয়ায়। তিনি দীর্ঘদিন ঘুরে বেড়ান আদিম এলাকাগুলোতে। আদিবাসীদের সঙ্গে কাটান বেশ কিছুদিন। তাতেই বেরিয়ে আসে বুমেরাংয়ের ভেতরগত তথ্য ও এর অদ্ভুত যন্ত্রকৌশলের রহস্যটি।
বুমেরাং কোনো
ভেল্কিবাজি নয়। পদার্থবিজ্ঞানের একটি মৌলিক সূত্রের মাধ্যমে সে চলাফেরা করে।
বুমেরাং কাঠ বা পাতলা লোহা দিয়ে তৈরি। এর চলার গতি আঁকাবাঁকা, ঘূর্ণিবায়ুর মতো পাক খাওয়া ছুটন্ত সাপের মতো ঢেউ তোলা।
বুমেরাংয়ের চলার ধরনটা সহজেই শিকারকে হতচকিত করে দেয়। কোনদিকে পালাতে হবে তা ভেবে
পায় না শিকার।
বুমেরাংয়ের
সেই বিচিত্র গতি তিনটি কারণের মিলিত ফল। কারণগুলো হলো এক, প্রথমেই নিক্ষিপ্ত বল। দুই, বুমেরাংয়ের নিজস্ব ঘূর্ণি। তিন, বায়ুর বাধা। এ তিনের সমন্বয়ে বুমেরাং এঁকেবেঁকে পাক খেয়ে
চলে। আর বুমেরাংয়ের অবাক করা আসল রহস্যটা হলো লক্ষ্যভ্রষ্ট হলে ফিরে আসে
নিক্ষেপকারীর কাছে। তবে এটি কিভাবে যে নিক্ষেপকারীর হাতে ফিরে আসে সে ব্যাপারে
অনেক তথ্য প্রকাশিত হলেও সেটি এখনও বিজ্ঞানী ও সাধারণ মানুষদের কাছে এক রহস্যের
বিষয়।
কোন মন্তব্য নেই