পোকা মানুষের খাবার - বিচিত্র যাদের খাদ্যাভ্যাস
মানুষের বেঁচে
থাকা বা জীবন ধারণের অন্যতম উপাদান হচ্ছে খাবার। নতুন নতুন খাবারের দিকে মানুষের
আকর্ষণ থাকে বেশী এ কথা অস্বীকার করার উপায় নেই। তাই বলে খাবার হিসেবে কীটপতঙ্গ!
না অবাক হওয়ার কিছু নেই। পৃথিবীর অনেক দেশেই খাবারের টেবিলে চলে এসেছে বিভিন্ন
ধরনের কীটপতঙ্গ। শুধু পশ্চিমের দেশগুলোতেই নয়, প্রাচ্যের বহু
লোকই পতঙ্গ থেকে তৈরি খাবার খাচ্ছেন অত্যন্ত যত্ন সহকারে।
বিশাল এ প্রাণী জগতের দুই-তৃতীয়াংশ দখল করে আছে আর্থোপোডা বা সন্ধিপদ পর্বের পতঙ্গ শ্রেণীর প্রাণী। প্রোটিন ও স্নেহ পদার্থে ভরপুর পোকা বহু প্রাণীরই খাবার তালিকায় রয়েছে। জীববিজ্ঞানীরা দেখেছেন, মাছের খাদ্যের শতকরা ৪০ ভাগই হচ্ছে জলজ পোকা। তাছাড়া টিকটিকি, গিরগিটি, গুঁইসাপ, ব্যাঙ প্রভৃতি প্রাণী পতঙ্গ ও তাদের লার্ভা বা শুককীট খেয়ে থাকে। পতঙ্গভুক প্রাণীর পাশাপাশি আবার রয়েছে পতঙ্গভুক উদ্ভিদও। এসব উদ্ভিদ পাতা বা দেহের কোনো অংশকে ফাঁদে পরিণত করে কীটপতঙ্গকে বন্দি করে এবং তারপর তাদের দেহ থেকে চুষে নেয় প্রোটিন জাতীয় খাদ্য। পতঙ্গভুক হিসেবে মানুষও এগিয়ে আছে বিভিন্ন কারণে। পতঙ্গ পৃথিবীর প্রায় সব জায়গাতেই প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায় এবং এদের সংগ্রহ করাও সহজসাধ্য। তাছাড়া প্রোটিন, চর্বি ও শক্তির উৎস হিসেবে কীটপতঙ্গ আমাদের অন্যসব খাবারের সঙ্গে পাল্লা দিতে পারে।
আমেরিকার
শিকাগো অঞ্চলের অধিবাসীরা গ্রাইল্লাস অ্যাসিমিলস্ বৈজ্ঞানিক নামের কালো-বাদামী
রঙের ঝিঁ ঝিঁ পোকাকে খাবারের টেবিলে এনেছেন। এ পোকাকে তারা প্রথমে আগুনে ঝলসে নেয়, তারপর মাখন ও লবণ লাগিয়ে বেশ মজা করে পরিবেশন করে। ক্যারিবিয়ান
সাগরের ছোট দ্বীপ জ্যামাইকার লোকেরা গণ্যমান্য অতিথিদের এ ঝিঁ ঝিঁ পোকা খেতে দেন।
গোবরে পোকার শুককীট খুবই পুষ্টিকর খাদ্য। সেরামিবিসাইডি গোত্রের বিভিন্ন প্রজাতির
গোবরে পোকার মোটাসোটা শুককীট বেশ উপাদেয় খাদ্য যা দক্ষিণ আফ্রিকার মাদাগাস্কার ও
মোজাম্বিকের লোকেরা এ লার্ভাকে কাঁচাই চিবিয়ে খায় অত্যন্ত তৃপ্তি সহকারে। গ্রিস ও
রোমের অতি সুসভ্য নাগরিকরাও গোবরে পোকার শুককীট থেকে তৈরি খাবার বেশ মজা করে খেয়ে
থাকেন। পেরুর জিভারো আদিবাসীরা পাম উইভিল নামের গোবরে পোকাকে খুব সুস্বাদু খাদ্য
হিসেবে মনে করেন।
পশ্চিম ভারতীয়
দ্বীপপুঞ্জের লোকেরা ইরগিটেস স্পিকুলেটাস বৈজ্ঞানিক নামের পঙ্গপাল পোকাকে খাবার
তালিকায় স্থান দিয়েছেন। পঙ্গপাল ঝাঁক বেঁধে মেঘের মতো উড়ে এসে কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই
মাইলের পর মাইল শস্যক্ষেত নষ্ট করে দেয়। অথচ বিভিন্ন প্রজাতির এ পঙ্গপালই এখন
তাদের খাবারের প্লেটে স্থান পেয়েছে। কানাডার ডানভেগান এবং ভ্যানকুভার অঞ্চলের
লোকেরা ঘাসফড়িংকে বিলাসবহুল খাদ্য হিসেবে মনে করেন।
তারা
ঘাসফড়িংগুলোকে প্রথমে আগুনে ঝলসে নেয়। তারপর এটি খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করেন।
বর্তমানে বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন দেশে পোকা খাওয়ার প্রবণতা দিন দিন বৃদ্ধি পেয়ে চলেছে।
কোন মন্তব্য নেই