ভয়ংকর ভয়াবহ ও রহস্যময় এক লাশের যাদুঘর
সমগ্র
পৃথিবী জুড়ে রয়েছে নানান ধরনের জাদুঘর। পুরাতন জিনিস, ঐতিহাসিক জিনিস বা প্রত্নতত্ত্ব নিদর্শন
থেকে আরম্ভ করে বিভিন্ন ধরনের জাদুঘর দেখতে পাওয়া যায়। তবে পৃথিবী জুড়া সেই সব জাদুঘর এর
মধ্যে আজ আমি আপনাদের
এমন একটি জাদুঘরের সাথে পরিচয় করে দেব যে জাদুঘরের কথা
শুনে আপনি আঁতকে উঠতে পারেন। কারন পৃথিবীতে হয়তো এমন ভয়াবহ বা ভয়ংকর যাদুঘর
আর একটিও নেই। এই ভয়াবহ যাদুঘরটির
নাম লাশের যাদুঘর। অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি গা শিউরে উঠা
এমনই একটি যাদুঘর আছে ইতালির সিসিলিতে।
১৯২০ সালের আগ পর্যন্ত প্রায় তিনশ বছর ধরে সিসিলির পালমেরো অঞ্চলে যেসব ধনী লোক মারা যেত তাদের সাধারণভাবে সমাধিস্থ করা হতো না। তাদের সাজানো হতো আকর্ষণীয় সব পোশাকে। তারপর সেগুলো সমাহিত না করে রেখে দেওয়া হতো এক মৃতদেহ সংরক্ষণাগারে। সিসিলি শহরের ক্যাটাকম্ব অঞ্চলের শব সংরক্ষণাগারের দেয়ালে এগুলো সারি বেঁধে সাজিয়ে রাখা হতো। এভাবেই সাজিয়ে রাখা হয়েছে অনেক অনেক মৃতদেহ, যার ফলে সেটা পরিনত হয়েছে লাশের যাদুঘরে!
অনেক
লাশের শরীরে কাপড় পরানো আছে। কাপড়গুলো দেখলে পুরানো আমলের এবং নোংরা মনে হতে পারে। কিন্তু ভালো করে দেখলে বোঝা যাবে লেস দেয়া কাপড়গুলো এক সময়কার সবচেয়ে
দামি কাপড়। সুতির কাপড়গুলো এখনো সিল্কের চেয়ে ভালো অবস্থায় আছে। প্রত্যেকটি লাশের গলায় ঝুলানো আছে মৃতের নাম। কিন্তু কালে কালে লেখা উঠে যাচ্ছে বেশির ভাগ পরিচয়পত্রেরই। কারো কারো গলায় ঝুলানো আছে জীবিত বয়সের ছবিও।
এই
লাশের জাদুঘরের রক্ষণাবেক্ষণকারী এখানকারই কিছু ধর্মযাজক। এরা এক সময় এই
মৃত ব্যক্তিদের আত্মীয়স্বজনকে এখানে জড়ো করে আয়োজন করতেন প্রার্থনার। এমনকি ভোজসভারও আয়োজন করা হতো। মৃতদেহে আত্মা না থাকলেও এভাবে
পরিবারের সবাই জড়ো হয়ে পিকনিকের আয়োজন করলে নাকি শান্তি পায় ওই আত্মাও! আর
এটাই ছিল ইতালীবাসীদের বিশ্বাস। তাই যুগ যুগ ধরে এই মৃত ব্যক্তিদের
আত্মীয়স্বজন ওখানে এসে প্রার্থনা করেছে, উৎসবে মেতেছে এ মৃতদেহের হাতে
হাত রেখে খুঁজছে পরামর্শ!
এখন অবশ্য অনেক কিছুই পাল্টে গেছে। এখন আর এখানে পিকনিকের আয়োজন করা হয় না। ভল্টে খাবার নিয়ে প্রবেশ নিষিদ্ধ। ঢোকার মুখে পাওয়া যায় রুটি ভাজার গন্ধ। দরিদ্র মানুষের মধ্যে ধর্মযাজকরা রুটি বিলি করেন। এই জায়গাটা কতোটা ভয়ঙ্কর ভেতরে না ঢুকলে কল্পনাও করা যাবে না। সাধারণত দুপুরের খাবার পর খুব কম সময়ের জন্য এখানে ভ্রমণে আসে পর্যটকরা। পর্যটকদের জন্য বরাদ্দ গাইড বইতে তেমন তথ্যের উল্লেখ নেই। সংরক্ষণাগারের দেয়ালেও ঝোলানো নেই কোনো সতর্কবাণী আসলে ধর্মযাজকরা এখানে পর্যটকদের আনাগোনা চান না। তবে এখানকার রক্ষণাবেক্ষণে আর ধর্মপ্রচার সাহায্য ইত্যাদির জন্য টাকার অভাবেই তারা পর্যটকদের জন্য দ্বার উন্মুক্ত করা হয়েছে। এখানে ওই অর্থে কোনো প্রবেশমূল্য নেই, কিন্তু যে কোনো দান গ্রহণ করা হয় সাদরে।
ভিতরে প্রবেশ করা মাত্র যে কোনো সাহসী মানুষেরও গা ছমছম করে উঠবে। ভয়, আতঙ্ক, বিস্ময়, সবকিছু একসঙ্গে এসে জাপটে ধরবে। চারদিকে শুধু লাশ আর লাশ। নকল বা ডামি নয়। সত্যিকারের লাশ- থরে থরে সাজানো। মোমের জাদুঘরের মতো কৃত্রিম নয়। অথবা মমির মতো কফিনে ঢাকা নয়। একেবারে সত্যিকারের মৃতদেহ। সরু করিডরের দু'পাশে সারি করে বাঁধা মৃতদেহ; হাত বাড়ালেই ছোঁয়া যাবে এমন দূরত্বে। কেউ হতবাক হয়ে যান, কেউ কেঁপে ওঠেন আতঙ্কে, কেউ চিৎকার করে ওঠেন, কেঁদে ওঠেন অনেকে।
আবার
ভয় কিংবা ঘৃণা সত্ত্বেও কৌতূহলবশত অনেকেই আলতো করে কোনো মৃতদেহের গায়ে বা কাপড়ে হাত
ছুঁইয়ে দেয়! আবার পরমুহূর্তেই শিউরে উঠে সরিয়ে নেয় হাত। এসব কারণে কর্তৃপক্ষ মৃতদেহগুলোর চারদিকে লোহার গ্রিল দিতে বাধ্য হয়েছে। অসাবধানতাবশত সিগারেটের আগুনেও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে অনেক মৃতদেহ। অনেক শিশু ঘটিয়েছে নানান ঘটনা। তাই এখন মৃতদেহগুলো লোহার গ্রিল ঘেরা জায়গায় ফ্লুরোসেন্ট বাতির নিচে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকে, কিংবা শুয়ে থাকে। এখন আর ঝাড়ু দেয়া
হয় না।
মৃতদেহগুলোর
হাড় কাপড় এতই পুরনো হয়ে গেছে যে ঝাঁটার আঘাতে
ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে; তাই ব্যবহার করা হয় ভ্যাকুয়াম ক্লিনার।
তাছাড়া সংরক্ষণের স্বার্থে এখন প্রতিদিনের বদলে শুধুমাত্র রবিবার দর্শনার্থীদের জন্য এ জাদুঘর উন্মুক্ত
হয়।
ক্যাটাকম্বে
প্রথম সংরক্ষত হয় ফাদার সিলভেস্ত্রো
দ্য গাবি'ওর দেহ। উনি
মারা যান ১৫৯৯ সালে। একই সময় সংরক্ষিত হয় চল্লিশ জন
সন্ন্যাসীর মৃতদেহ। বলা হয়, ওই সময়কার প্লেগ
রোগাক্রান্তদের চিকিৎসা করতে গিয়ে ওই সন্ন্যাসীরাও আক্রান্ত
হন প্লেগে, মারা যান কাছাকাছি সময়ে আর এ ঘটনার
পর থেকেই ক্যাটাকম্ব পরিচিত হয়ে ওঠে পবিত্র ভাবগাম্বীর্যপূর্ণ এক জায়গা হিসেবে।
আর তৎকালীন ধনী অভিজাত ব্যক্তিরাও উদ্গ্রীব হয়ে ওঠেন। যে তাদের আত্মীয়দের
মৃতদেহ কিংবা মৃত্যুর পর নিজেদের মৃতদেহকেও
যেন এই পবিত্র স্থানে
সংরক্ষিত করা হয়।
কালক্রমে
ক্যাটাকম্ব হয়ে ওঠে গোরস্তানের দামি বিকল্প। মৃতদেহগুলোকে প্রথমে বিশেষ করে সেলারে ভরে রাখা হতো এক বছর। বদ্ধ
ওই জায়গায় ওই সময়ের ভিতরে
শুকিয়ে যেত মৃতদেহের জলীয় সব উপকরণ। তারপর
রোদে শুকিয়ে মৃদতেহগুলোকে গোসল করানো হতো ভিনেগারে। তারপর খড়ে মুড়ে নানান জবিটি দিয়ে পরিয়ে দেয়া হতো দামি-ঝলমলে একপ্রস্থ জামা। উনিশ শতকে এসে অবশ্য মৃতদেহ সংরক্ষণের নতুন পদ্ধতি বের হয়। তখন মৃতদেহগুলোকে গোসল করানো হতো আর্সেনিক কিংবা মিল্ক অব ম্যাগনেসিয়া দিয়ে,
যাতে নাকি ত্বক থাকে আরো জীবন্ত-সতেজ! তবে এসব নিয়ে এখনকার ধর্মযাজকরা, যারা বর্তমানে ক্যাটাকম্বর দেখাশোনা করছেন তারা খুব বেশি মুখ খুলতে চান না। ১৮৮০ সালে এসে এভাবে মৃতদেহ সংরক্ষণ বন্ধ করা হয়।
যেসব মৃতদেহ তখনো পুরোপুরি সংরক্ষণ করা হয়নি সেগুলো করুণ পরিণতি ঘটে, পচে ক্ষয়ে একাকার হতে থাকে ওগুলো। সেই থেকেই ক্যাটাকম্বের সুদিন আর ফেরত আসেনি। এখন আর কেউ ক্যাটাকম্বের মৃতদেহের বিদেহী আত্মার জন্য ফুল আনে না। একমাত্র ব্যতিক্রম রোজালিয়া লোম্বার্ডোর মৃতদেহ। হতভাগ্য এই মেয়েটি মারা যায় মাত্র দু'বছর বয়সে ১৯২০ সালে। তার হতভাগ্য বাবা উদ্ভ্রান্তের মতো হয়ে মৃতদেহ সংরক্ষণ না করার নিয়ম ভেঙে তার মেয়ের মৃতদেহটিকে সংরক্ষণ করেন। ভদ্রলোক ছিলেন চিকিৎসক, ইনজেকশন, প্রয়োগের মাধ্যমে তিনি তার মেয়ের মৃতদেহটি সংরক্ষণ করে রাখেন। ওই ছোট্ট মেয়েটির মৃতদেহটি ক্যাটাকম্বে সংরক্ষণ করা আছে কাচের ঢাকনা দেওয়া এক কফিনে। এখনো কি ভীষণ জীবন্ত শরীর। মনে হয় ঘুমিয়ে আছে। ডাকলেই উঠে আসবে এক্ষুনি।
নানান
বিপদ আছে এই ক্যাটাকম্বে। এ
শত শত মৃতদেহের মাঝে
এসে আতঙ্কে অসুস্থ হয়ে যান অনেকেই। কেবল পর্যটকদের বিপদই নয় বিপদে আছে
ক্যাটাকম্ব নিজেও। ভূ-গর্ভস্থ এই
শব জাদুঘর উপরের যান চলাচলে এর টিকে থাকাই
এখন রীতিমতো হুমকির মুখে। তা ছাড়া যারা
এর দেখভাল করে রাখবেন সেই সন্ন্যাসীদের সংখ্যা ৫০০ থেকে কমে দাঁড়িয়েছে মাত্র চল্লিশে। লাশের জাদুঘর আস্তে আস্তে নিজেই লাশে পরিণত হতে চলেছে!
আপনার সাইটটি ভাল লাগল ।এখানে (http://monthlysurvey.blogspot.com)বিজ্ঞাপন দিয়ে ভাল ভিজিটর পেতে আমার সাথে যোগাযোগ করুন ।
উত্তরমুছুনমোবাইলঃ 8801828644020
ইমেইলঃ moktolota@yahoo.com