পৃথিবীর সর্ববৃহৎ ঘড়ি : মক্কা ঘড়ির রহস্য
সারা বিশ্বের সময় নির্ধারিত হয়ে থাকে গ্রিনিচ মান সময় অনুসরণে। তবে গ্রিনিচ মানের দিন এখন শেষ হয়ে গেছে বলা যায়। কারণ, দিন এসেছে মক্কা মান সময়ের। পৃথিবীর সময় নির্ধারক ঘড়িকে অতিক্রম করে মক্কায় অবস্থিত মক্কা ক্লক এখন পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ঘড়ি। পবিত্র কাবা শরিফের দক্ষিণ গেটের কাছাকাছি ৭টি বিশাল টাওয়ারের আবরাজ আল বাইত কমপ্লেক্সের মাঝে তৈরি করা হয়েছে রয়েল মক্কা ক্লক টাওয়ার। এ টাওয়ারের ওপর বসানো হয়েছে বিশ্বের সর্ববৃহৎ ঘড়ি 'মক্কা ঘড়ি'। আজকে আমি আলোচনা করবো মক্কা ক্লকের আদ্যপান্ত।
শুধু
বিগবেন ও মক্কা ক্লক
নয়, বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে রয়েছে অনেক সূউচ্চ ঘড়ি। কানাডার পিস টাওয়ার ক্লক, ডেইরা ক্লক টাওয়ার দুবাই, রাজাভাই টাওয়ার ভারত, জিমার টাওয়ার বেলজিয়াম সহ বিশ্বের অনেক
শহরে রয়েছে দর্শনীয় ঘড়ি। বাংলাদেশের সিলেটেও রয়েছে একটি ঘড়ি যুক্ত টাওয়ার। আলি আমজাদ টাওয়ার নামের এই ঘড়িটি নির্মাণ
করেন আলী আমজাদের পিতা ১৮৭২ সালে।
তুরস্কের
রাজধানী ইস্তাম্বুলে সেবাহির মলে যে ঘড়িটি আছে
আয়তনের দিক দিয়ে এটিই ছিল এতদিন বিশ্বের বৃহত্তম ঘড়ি, যার ডায়াল ছিল ৩৬ মিটার চওড়া।
কিন্তু মক্কা ঘড়ি তৈরি হওয়ার পর এই রেকর্ড
মক্কা ঘড়ি দখল করে নিয়েছে। এই ঘড়ির ঘড়ির
ডায়ালের পরিমাপ ৪৩ মিটার। লন্ডনের
বিগবেনের চেয়ে মক্কা ঘড়ির ডায়াল ৬ গুণ বড়।
মক্কা
ঘড়িটি পৃথিবীর ৩য় সুউচ্চ ভবন
আবরাজ আল বাইত টাওয়ারে
স্থাপন করা হয়েছে। এই টাওয়ারটি মোট
৯৫ তলা। এই টাওয়ারের চেয়ে
উচু টাওয়ার বিশ্বে আর দুটি রয়েছে।
দ্বিতীয় অবস্থানে আছে চীনের সাংহাই টাওয়ার এবং প্রথম স্থানে আছে সংযুক্ত আরব আমিরাতের বুর্জ খলিফা। মক্কার আবরাজ আল বাইত টাওয়ারে
রয়েছে সাত তারা হোটেল সহ বৃহৎ শপিং
মল। টাওয়ারের উচ্চতা ৬০১ মিটার বা ১ হাজার
৯৭২ ফুট। টাওয়ারের মোট ফ্লোরের আয়তন ১৫ লক্ষ বর্গ
মিটার। ৩০০ কোটি মার্কিন ডলারে নির্মিত চতুর্মুখী ঘড়িটির এক মুখে লাগানো
হয়েছে ৯ কোটি ৮০
লাখ পিস গ্লাস মোজাইক। প্রতিটি মুখে আরবিতে লেখা আছে 'আল্লাহু আকবর' শব্দ গুচ্ছ, যা ২১ হাজার
রঙিন বিজলি বাতির আলোয় উদ্ভাসিত হয়ে ওঠে। আর এই লেখা
পড়া যায় ৩০ কিলোমিটার বা
১৯ মাইল দূর থেকেও।
আল্লাহর
নামের উপরের দিকে ৫৯০ মিটার বা ১ হাজার
৯৪৭ ফুট উচ্চতায় স্থাপন করা হয়েছে সোনা দিয়ে মোড়ানো ৭৫ ফুট ডায়ামিটারের
একটি বাঁকা চাঁদ। বিশেষ বিশেষ দিবস উপলক্ষে এ চাঁদ থেকে
আকাশে বিচ্ছুরিত হবে প্রায় ১৬টি উজ্জ্বল আলোক রশ্মি, যা আকাশের ১০
কিলোমিটার বা সোয়া ৬
মাইল উঁচুতে ছড়িয়ে যাবে। প্রায় ২০ লাখ LED বাতি
আল্লাহর নামকে প্রজ্জ্বল করে রাখবে রাতভর।
মক্কা
ক্লকের বিল্ডিং কমপ্লেক্সটি বিশ্বের বৃহত্তম মসজিদ এবং ইসলামের সবচেয়ে পবিত্র জায়গা মসজিদ আল হারাম থেকে
মাত্র কয়েক মিটার দূরে অবস্থিত। ১২০ তলা বিশিষ্ট মসজিদটি তৈরি করতে মোট খরচ হয়েছে ১৫ বিলিয়ন মার্কিন
ডলার।
২০০৪
সালে এটির নির্মাণ কাজ আরম্ভ হয় এবং ২০১০
সালের ১১ আগস্ট পবিত্র
রমজান মাসের প্রথম দিনে মক্কা ঘড়ি তিন মাসের জন্য পরীক্ষামূলক ভাবে চালু করা হয়। পরবর্তীতে ২০১১ সালে এটি পূর্ণাঙ্গভাবে চালু করা হয়। এই স্থাপত্যটি নির্মার্ণে
মূল স্থাপত্যের দায়িত্বে ছিল সৌদি বিন লাদিন গ্রুপ এবং এর স্থপতি ছিল
দার আল হানদাশাহ। বর্তমানে
এই টাওয়ার ও ঘড়িটি মুসলিম
বিশ্ব সহ সমগ্র বিশ্বের
একটি দর্শনীয় স্থান। প্রতি বছর হজ্জ্বের সময় হাজীরা এই ঘড়ি ও
টাওয়ারকে স্বচক্ষে পর্যবেক্ষণ করে থাকেন।
কোন মন্তব্য নেই