তুরস্কের ভয়ানক এক মানুষ খেকো গুহা !
আমাদের
এই বিশ্ব জগতে কত কিছু যে
আছে তার কোন শেষ নেই। আশ্চর্য, বিচিত্র, ভয়াবহ, ব্যতিক্রমী, রোমাঞ্চিত নানা ধরনের উপাদানে ভরপুর আমাদের এই পৃথিবী। যার
মধ্যে একটি উপাদান আছে ভয়াবহ বা ভয়। ভয়,
শব্দটি শুনলে যেন ভয় হয়। কারো
ভয় সাগরে, কারো ভয় পাহাড়ে, কারো
ভয় ভূতে। আবার আমরা বাঘ, ভাল্লুক, সাপ, কুকুর, বানর ইত্যাদি দেখেও ভয় পায়। আবার
আমরা প্রচণ্ড ভয় পায় যদি
মানুষ খেকো কোন জন্তু-জানোয়ারের কথা শুনি।
যেমন, মানুষ খেকো গাছ, মাছ, প্রেতাত্না ইত্যাদি। এতদিন হয়তো আপনার মানুষ খেকো গাছ, মাছ, ভূত, ড্রাকুলা ইত্যাদির কথা শুনেছেন। কিন্তু কখনও কি মানুষ খেকো গুহার কথা শুনেছেন? হ্যাঁ, অবিশ্বাস্য বা আশ্চর্যজনক হলেও সত্যি যে, আমাদের এই পৃথিবীতে এমনই একটি গুহা আছে যেটি মানুষ খেকো গুহা নামে পরিচিত। গুহা কি মানুষ খেতে পারে? হয়তো পারে আবার পারে না। কিন্তু আমরা যে গুহার কথা বলছি সেটাতে শুধু মানুষ কেন, কোন জীব ঢুকলেই আর জীবিত বেরিয়ে আসতে পারে না। তাহলে এবার জানা যাক সেই ভয়ানক মানুষ খেকো গুহাটি সম্পর্কে।
গ্রিক
ভূগোলবিদ স্ট্রাবোর মতে প্রাচীন গ্রিক শহর হিয়ারাপোলিসে ছিল এপোলো দেবতার একটি মন্দির। মন্দিরটি এক সময় নানা
কারণে রহস্যময় মন্দির হিসেবে পরিচিতি পায়। এই মন্দিরের পাশেই
ছিল একটি গুহা। এই গুহাটির বৈশিষ্ঠ
ছিল যে, এই গুহার ভিতরে
কোন জন্তু-জানোয়ার ছুঁড়ে দিলে তা আর ফিরে
আসতো না। এমনকি কোন মানুষও যদি এই গুহার প্রবেশ
মুখ সামান্যও অতিক্রম করতো তাহলে সেও আর ফিরে আসতো
না।
তবে
আশ্চর্যের ব্যাপার এই যে, পুরোহিতরা
এই গুহার ভিতরে নিরাপদে ঢুকতে পারতো আবার বের হয়েও আসতে পারতো। তবে পুরোহিতরা যখন বেরিয়ে আসতো তখন তাদের মুখমণ্ডল ফুলে যেত এবং রক্তাত্ত্ব হয়ে যেত। প্রাচীন গ্রিক বাসীদের বিশ্বাস ছিল এই গুহাটি হলো
পরলোকে যাওয়ার পথ এবং সেখানে
রাজত্ব করে অপদেবতারা। সাধারণ মানুষ বা জীব-জানোয়াররা
সেখানে গেলে অপদেবতারা তাদের মেরে ফেলে আর দেবতারা গেলে
তাদের ঐশ্বরিক ক্ষমতাবলে অপদেবতাদের সাথে লড়াই করে ফিরে আসতে পারে।
স্ট্রাবো
এই তথ্যটি তার পুঁথিতে লিখেছিলেন ২০০০ বছর আগে। অবশ্য বর্তমানে আধুনিক বিশ্বের মানুষ ভূত, প্রেত, দেবতা বা অপদেবতা বিশ্বাস
করে না। বিজ্ঞানেও এদের কোন বাস্তবতা নেই। তাহলে কি সেখানে কোন
অপদেবতা ছিল না? আবার না থাকলেই বা
সেখানে মানুষ, জীব-জন্তুদের মেরে ফেলতো কারা? তাহলে কি ওই গুহাটি
নিজেই মানুষ খেকো গুহা! জানা যাক পরবর্তী ঘটনা।
স্ট্রাবোর
পুঁথির সূত্র ধরে আমেরিকার নিউইয়র্ক কলেজের অধ্যাপক শেলডেন এই বিষয়ে নির্ভরযোগ্য
নতুন তথ্য প্রকাশ করেছেন। তিনি মত প্রকাশ করেছেন,
ওই গুহার নিচ থেকে প্রাকৃতিক ভাবে কার্বন-ডাই-অক্সাইড গ্যাস নির্গত হতো। ফলে কোন মানুষ বা জীব-জন্তু
গুহার ভিতরে প্রবেশ করলে কার্বন-ডাই-অক্সাইড গ্যাসের প্রভাবে শ্বাসকষ্টে মারা যেত। তাহলে এখন প্রশ্ন দেবতারা ভিতরে ঢুকলে মারা যেত না কেন? এ
ব্যাপারে শেলডেন বলেন, দেবতারা বিষয়টা পূর্ব থেকেই জানতো সেজন্য তারা এই গুহার ভিতরে
ঢুকে দম বন্ধ করে
থাকতো। এবং বাইরে এসে তাদের শক্তি ও ক্ষমতার মহিমা
প্রচার করতো। তবে তারা যখন গুহার বাইরে আসতো তখন তাদের মুখমণ্ডল গ্যাসের চাপে ফোলা ও রক্তাত্ত্ব থাকতো।
এই
প্রাচীন গ্রিক শহরটি বর্তমানে পশ্চিম তুর্কির পাযুক্কাল শহরে অবস্থিত। সরেজমিনে সেখানে গিয়ে দেখা গেছে, সেখানে আছে প্রচুর উষ্ণ প্রসরণ। তার মধ্যে আছে অধিক পরিমাণ ক্যালসিয়াম কার্বনেট। এসিডের সঙ্গে বিক্রিয়ার ফলে এ থেকে উৎপন্ন
হয় প্রচুর কার্বন-ডাই-অক্সাইড গ্যাস। বাষ্প এবং কার্বন-ডাই-অক্সাইড কোনও ফাটল দিয়ে ঢুকে যায় গুহার ভেতর। আর তাই ভিতরে
কয়েক পা গেলেই নিশ্চিত
মৃত্যু। এপোলোর মন্দিরের সেই রহস্যময় গুহাটি আজও আছে।
কয়েক
বছর আগে একদল অস্ট্রেলীয় ছাত্র অনুসন্ধিৎসা বশত: ওই গুহার ভেতরে
ঢুকেছিল পরীক্ষার জন্য। দুর্ভাগ্য হলেও সত্য এটাই যে,
তারা আর ফিরে আসেনি।
এরপর থেকে তুর্কি সরকার গুহামুখে লোহার পাত বসিয়ে দিয়েছে । যাতে আর
কেউ ভিতরে প্রবেশ না করতে পারে।
কোন মন্তব্য নেই