মানুষ হত্যাকারী অভিশপ্ত এক ভুতুড়ে গাড়ির গল্প
ভূত!
কি ভয় পেলেন না
কি? না ভয়ের কিছু
নেই। আমরা এখন কোন ভূত নিয়ে আলোচনা করবো না। হ্যাঁ, তবে আলোচনা করবো ঐতিহাসিক এক ভূতুড়ে গাড়ী
সম্পর্কে। অবাক হলেন? গাড়ী আবার ভূতুড়ে হয় কিভাবে ভেবে?
মানুষের উপর যদি ভূতের আঁচড় পড়তে পারে তাহলে গাড়ীর উপর কি পড়তে পারেন
না! ইতিহাস বলে এরকম ঘটনা বিরল নয়। যেমন এমনই একটি ভূতুড়ে গাড়ীর কথা আজ আমি আপনাদের
জানাবো। কথিত আছে এই ভুতুড়ে গাড়ির
কারণেই নাকি প্রথম বিশ্বযুদ্ধ হয়েছিল। এমনটি ধারণা করেন অনেকেই।
যুদ্ধের ভয়াবহতা আর ক্ষয়ক্ষতি যেমনই হোক ভুতুড়ে সেই গাড়িটির কারণে অসংখ্য নিরীহ লোক প্রাণ হারিয়েছিল। গাড়িটি আসলেই অভিশপ্ত বা ভূতুড়ে ছিল কি না লেখাটি পড়ে বিচার করার দায়িত্ব রইল আপনাদের উপর। বিখ্যাত সেই গাড়িটি ছিল মূলত অস্ট্রিয়ার যুবরাজ আক উয়ুক ফার্দিনান্দের । রাজকীয় গাড়ি হওয়ায় এর বিশেষত্ব ছিল অন্য যে কোনও গাড়ির চেয়ে অনেক বেশি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত গাড়িটি বিখ্যাত হয়ে ওঠে এর অদ্ভুত সব কীর্তিকলাপের জন্য। ভুতুড়ে সেই গাড়িটি ব্যবহারের প্রথম দিনই যুবরাজ আক উয়ুক ফার্দিনান্দ এবং তার স্ত্রী ডাচেস হোহেন নিহত হন আততায়ীর গুলিতে। এই হত্যাকাণ্ডের পরপরই ১৯১৪ সালের ২৮ জুলাই অস্ট্রিয়া সার্বিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। অস্ট্রিয়া সরকার ঘোষণা করে যে, ফাইভ-বি দলের সেনা অধিনায়ক হবেন পোতারেক। ওদিকে পোতারেক কুখ্যাত সেই গাড়িটি কিনে নেন গভর্নরের কাছ থেকে।
দুর্ভাগ্যবশত
তিনি যুদ্ধে পরাজিত হন এবং মৃত্যুবরণ
করেন । ১৯১৫ সালে
গাড়িটি প্রদান করা হয় ফাইভ-বি
সেনাদলের ক্যাপ্টেনকে। তিনিও এই গাড়িটি খুব
বেশিদিন ব্যবহারের সুযোগ পাননি। তিনি এটি ব্যবহার করতে পেরেছিলেন মাত্র ৯ দিন। ১০
দিনের মাথায় দু'জন যাত্রীসহ
মৃত্যু হয় তার। এরপর
১৯১৮ সালে যুগোস্লাভের গভর্নর অস্ট্রিয়া সফরে আসেন এবং গাড়িটি কিনে নেন। ১৯১৯ সালে তিনিও ব্রেক ফেল করে মারা যান। তবু থেমে থাকেনি গাড়িটির অপয়া কীর্তি। এরপর সারকিন্স নামে একজন সরকারি ডাক্তারের মালিকানায় আসে গাড়িটি। সেই ডাক্তার রোগী দেখতে যাওয়ার সময় রাস্তার পাশের খালে পড়ে নিহত হন।
ডাক্তারের
মৃত্যুর পরও গাড়িটি বহুবার হাতবদল হয়েছে। আর প্রতিবারই মালিকের
মৃত্যু হয়েছে। এত দুর্নাম থাকা
সত্ত্বেও অবশেষে গাড়িটি কিনে নেন এক শৌখিন সংগ্রাহক।
তিনি গাড়িটি কিনে সংস্কারের জন্য দিয়ে দেন এক মোটর মেকানিকের
কাছে। মেকানিক গাড়িটিকে নতুন করে গড়ে তোলেন এবং এক ধনী কৃষকের
কাছে বিক্রি করে দেন। সারায়েভো শহরে যেদিন তিনি গাড়িটি নিয়ে প্রথম প্রবেশ করলেন সেদিনই শুরু হলো দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ। সবাই ধরে নিলো অভিশপ্ত ভৌতিক ওই গাড়িটির জন্যই
শুরু হয়েছে এই যুদ্ধ।
শহরে
সবার প্রতিবাদের মুখে জেলা প্রশাসক আদেশ দেন, ওই কৃষককে হয়
শহর ত্যাগ করতে হবে, নয়তো গাড়ির মায়া ত্যাগ করতে হবে। প্রথম শর্তকে বেছে নিয়ে শহর ত্যাগ করে অন্য শহরে রওনা দেন গাড়ির মালিক। কিছুদূর এগুতেই গাড়িটি বিগড়ে গেল। কোনও উপায় না দেখে তিনি
দুটি বলদ গাড়ির সঙ্গে জুড়ে দিলেন। আর তিনি বসলেন
বনেটের উপর । কিছুদূর এগুতেই
গাড়িটি হঠাৎ স্টার্ট হয় এবং মুহূর্তেই
বলদ দুটোকে ধাক্কা দিয়ে বনেটের উপর বসে থাকা মানুষটিকে পিষে ফেলে চলে যায়। ১৯৩৯ সালের ডিসেম্বরে ওই গাড়িটি কিনে
নেন হস ফিল্ট নামের
একজন ব্যক্তি। মেরামত করে বন্ধুর জন্মদিনে যাওয়ার পথে ড্রাইভার একজন মানুষকে বাঁচাতে গিয়ে তিনিসহ নিহত হন ছয় বন্ধু।
এভাবেই ভুতুড়ে গাড়িটি ঘটিয়ে গেছে অদ্ভুত সব কীর্তিকলাপ।
এখন জানতে চান কিভাবে সমাপ্ত হয়েছিল এই ভূতুড়ে গাড়ীর ইতিহাস? পরে অস্ট্রিয়া সরকার গাড়িটি কিনে একটি মিউজিয়ামে রাখার ব্যবস্থা করে। ২য় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে ১৯৪৫ সালের ২২ জুলাই হঠাৎ সেই মিউজিয়ামের উপর আছড়ে পড়ে বোমা । এবং সাথে সাথেই সেই অভিশপ্ত গাড়িটি সহ পুরো মিউজিয়ামটি পুড়ে ছাই হয়ে যায়।
কোন মন্তব্য নেই