আপাদমস্তক এক হস্তি মানবী পাওলিন পর্টার !
বিশ্বব্যাপী
মোটা মানুষ আছে হাজার হাজার। কিছু কিছু এলাকা আছে যেখানে অধিকাংশ মানুষই মোটা। স্থূলতা বা মুটিয়ে যাওয়া
সমস্যাটি এখন সাধারণ সমস্যা। বিশ্বব্যাপী ভাইরাস আকারে খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে এই সমস্যাটি।
যারা মুটিয়ে যাচ্ছেন তারা খাদ্য গ্রহণের মাত্রাকে কমিয়ে একবারে শূন্যের কোটায় নামিয়ে দিচ্ছেন। আবার ঠিক এর উল্টো ছবিও আছে। অনেকে আছে এতই হালকা যে, তারা মোটা হওয়ার জন্য সর্বদা প্রচুর পরিমাণে খাদ্য গ্রহণ করে যাচ্ছেন আবার প্রার্থনাও করছেন। কিন্তু তারা যদি পাওলিকে দেখতেন তাহলে হয়তো আর মোটা হওয়ার ইচ্ছা পোষণ করতেন না। মোটা মানুষের উদাহরণ খুঁজতে গেলে পাওলির মতো উদাহরণ হয়তো আর পাওয়া যাবে না।
তার
নাম পাওলিন পর্টার। তবে সবাই 'পাওলি' বলে ডাকে। তার বয়স ৪৭ বছর। পাওলি
যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার স্যাক্রামেন্টোর বাসিন্দা। তার ওজন ৩১৭ কেজি বা প্রায় ৮
মণ। কি অবাক হলেন?
অবাক হওয়ারই কথা। কারণ, এত ওজনের কোনও
মহিলার কথা হয়তো এর আগে আপনি
শোনেন নি। পাওলি বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে বেশী ওজনের নারী। ২০১২ সালের গিনেজ ওয়ার্ল্ড রেকর্ড বুকে তার নাম উঠেছে বিশ্বের সবচেয়ে ওজনের নারী হিসেবে। পাওলি তার এই স্বাস্থ্য নিয়ে
গর্বিত কিন্তু সুখী নয়।
বিশাল
ওজনের এই শরীর নিয়ে
তিনি আছেন নানান সমস্যায়। তিনি তার একার চেষ্টায় গোসল করতে পারেন না। যেতে পারেন না শপিং মলে।
সব কাজেই তাকে সাহায্য নিতে হয় অন্যের। সর্বদা
তার কাজে এবং তার দেখাশুনায় সহায়তা করে তার একমাত্র ছেলে ডিলান। ডিলানের বয়স এখন ১৬। ডিলান
তার মাকে বিছানা থেকে তুলে চেয়ারে বসায়, মোটর হুইল চেয়ারে বসিয়ে মাকে বাইরে নিয়ে যায় এবং দিন-রাত তার মায়ের ট্রলিতে খাবার সাজিয়ে দেয়।
পাওলি
এত স্বাস্থ্য কিভাবে তৈরি করলো নিশ্চয়ই আপনাদের জানতে ইচ্ছা হচ্ছে! পাওলি তার এই স্বাস্থ্য বানিয়েছেন
প্রচুর পরিমাণে খেয়ে। দিনের শুরুতে ব্রেকফাস্টে পাওলির লাগে এক ডজন ডিম,
দুই কেজি মাংসের চপ, চার টুকরা আলু দিয়ে তৈরি হ্যাশ ব্রাউন, বড় দশ টুকরা
মাখন-পাউরুটি, আধা লিটার আইসক্রিম আর লিটার খানেক
মিল্ক শেক। এই হচ্ছে তার
সকালের নাশতা। দুপুরের খাবার সম্পর্কে পাওলি কোনও তথ্য প্রকাশ করেননি। কারণ, সেটার তালিকা অনেক লম্বা হবে। লোকে শুনলে হয়তো ভয় পেয়ে যেতে
পারে। রাতে তিনি খাবার হিসেবে গ্রহণ করেন আটটি পিৎজা, বড় এক বাটি
পেস্তা বাদাম আর এক কেজি
মাংস।
পাওলির স্বামীর নাম আলেক্স। অতিরিক্ত ওজনের কারণেই স্বামী আলেক্সের সঙ্গে সম্প্রতি বিচ্ছেদ ঘটেছে তার। পাওলিনের একটা বিষয়ে আক্ষেপ রয়ে গেছে। আর সেটি হচ্ছে, পাওলিকে ওজন বাড়িয়ে গিনেস রেকর্ড বুকে নাম উঠাতে বলেছিলেন তার স্বামী। অথচ স্বাস্থ্য বৃদ্ধি হবার পর তার স্বামী এই বিশাল ওজনের জন্য তাকে ত্যাগ করেছেন। বিয়ের সময় পাওলির ওজন কিন্তু কম ছিল না। বিয়ের সময় আলেক্সের ওজন ছিল ৭০ কেজি আর পাওলিনের ওজন ছিল ২৭৩ কেজি। তাদের স্বামী-স্ত্রীর বিচ্ছেদ ঘটলেও তাদের ছেলে ডিলন মা'কে ছেড়ে যাননি। সে মায়ের সঙ্গেই রয়ে গেছে। ডিলান একদিকে কলেজের পড়াশোনা করছে অন্যদিকে তার মায়ের স্বাস্থ্যরক্ষার জন্য মাকে সেবা করে যাচ্ছে।
পাওলিন
এখন তার এই মোটা শরীরকে
পছন্দ করেন না। তিনি এখন চান ওজন কমিয়ে সুস্থ-স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে। তার ওজন রেকর্ড হয়ে
যাওয়ার পর ওজন বাড়ানো
নিয়ে তার আর কোনও আগ্রহ
নেই। ওজন বাড়িয়ে বিশ্বরেকর্ড গড়লেও তার মনের কোণে রয়ে গেছে ছোট্ট ব্যথা। কারণ এই ওজনের কারণেই
তিনি তার স্বামীকে হারিয়েছেন। তা ছাড়া তিনি
নিজে তেমন কোনও কাজ করতে না পারায় ছেলের
ভবিষ্যৎ নিয়ে তিনি বেশ চিন্তিত।
পাওলিনের
এই আক্ষেপ সংবাদপত্রে পড়ে তার ওজন কমাতে এগিয়ে এসেছেন ক্যালিফোর্নিয়ার বিশিষ্ট চিকিৎসক ডা. ক্রেরিস স্টিলি। ডা. স্টিলির টিম প্রতিদিন তদারকি করছেন পাওলিনের। তাদের বিশ্বাস পাওলি খুব শীঘ্রই তার স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে পারবে।
কোন মন্তব্য নেই