শিক্ষামন্ত্রী যখন নিজেই পরীক্ষার্থী !
“শিক্ষার
কোন শেষ নেই” “পড়ার কোনও বয়স নেই” শিক্ষার ব্যাপারে এরকম বিভিন্ন প্রবাদ আমরা জানি এবং মানি। এই প্রবাদগুলো সাধারণত
ব্যবহার করা হয় শিক্ষার গুরুত্ব
ও তাৎপর্যকে বুঝানোর জন্য। আবার শিক্ষার গুরুত্ব বুঝানোর জন্য রয়েছে সত্যি বা রূপক নানান
কাহিনী। যেমন আমরা জানি “আদু ভাই” এর মতো গল্প।
তবে শিক্ষার যে সত্যিই কত
গুরুত্ব আছে বা শিক্ষার মধ্যে
কত যে মজা আছে
তা এই মহাবিশ্বে অনেকেই
প্রমাণ দিয়েছেন আদু ভাইয়ের মতো লাজ লজ্জা ভুলে গিয়ে ছোটদের কাতারে মিশে গিয়ে। যার সর্বশেষ উদাহরণ ভারতের পদুচেরির শিক্ষামন্ত্রী। যিনি শিক্ষামন্ত্রী হয়েও পরীক্ষা দিয়েছেন সাধারণ ছাত্রদের সাথে এক সাথে।
পাবলিক পরীক্ষা কেন্দ্রে সাধারণত শিক্ষামন্ত্রী এসে থাকেন তবে তিনি আসেন পরীক্ষা পরিদর্শনের জন্য। তবে সত্যিই অবাক হতে হলো ভারতের পদচেরির তিনদিবানম স্কুলের পরীক্ষার্থীদের। কারণ তাদের স্কুলে শিক্ষামন্ত্রী আসলেন ঠিকই তবে পরিদর্শন করতে নয় আসলেন স্বয়ং পরীক্ষার্থী হিসেবে। ভারতের কেন্দ্র শাসিত রাজ্য পদচেরির এই শিক্ষামন্ত্রীর নাম পি এম এল কল্যাণ সুন্দরম। দশম শ্রেণী পর্যন্ত পড়ার পর পরীক্ষায় অংশ নিয়ে দুটি বিষয়ে কৃতকার্য হতে না পেরে ১৯৯১ সালে লেখাপড়া শেষ করে দিয়েছিলেন তিনি, তবে ৩৪ বছর বয়েসে শিক্ষামন্ত্রী হবার পর মনে করলেন তার শিক্ষা
জীবনের
ফেল করা দুটি বিষয়ে পাশ করে অন্তত একটি ডিগ্রী নেওয়া দরকার। তাই তিনি দীর্ঘ ২০ বছর পর
২০১১ সালের দশম শ্রেণীর পাবলিক পরীক্ষায় বসে পড়েছেন পরীক্ষার্থীর আসনে সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীদের সাথে। অনেকেই তাকে বলেছিল টাকা দিয়ে তো ডিগ্রী কেনা
যায়, তবে এত কষ্ট করা
ও লজ্জার পাত্র হবার দরকার কি? তিনি তাদের বলেছিলেন সব কিছুই নিয়ম
অনুযায়ী হওয়া উচিত। মন্ত্রী চাননি তার পরীক্ষার সংবাদটি প্রচার মাধ্যমে ফলাও করে প্রচার হোক, আর তাই তিনি
পরীক্ষা দিয়েছেন পদচুরি শহর থেকে ৪০ কিলোমিটার দূরের
ভিলুপুরাম জেলার তিনদিবানম সরকারি বিদ্যালয়ে। শিক্ষামন্ত্রী পরীক্ষা কেন্দ্রে আসার আগ পর্যন্ত তার
পরীক্ষার বিষয়ে জানতেন না স্বয়ং শিক্ষা
কর্মকর্তা সি শানুমুগামও।
১৯৯১
সালের পরীক্ষায় বিজ্ঞান ও সমাজ বিজ্ঞানে
ফেল করে লেখাপড়ার পাট গুটিয়ে নিয়েছিলেন তিনি। পরে মন দেন পারিবারিক
ব্যবসায়। ২০০১ সালে রাজনৈতিক অঙ্গনে পা রাখেন তিনি।
২০০৬ সালে রাজ্য বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির টিকিটে জয়ী হয়ে মন্ত্রী সভায় আসেন।
১৯৯১
সালের পরীক্ষায় শিক্ষামন্ত্রী কল্যাণ সুন্দরম গণিতে ৭৫ নম্বর পেয়েছিলেন।
আর ইংরেজি ও তামিলে পেয়েছিলেন
যথাক্রমে ৪৭ ও ৪৮
নম্বর। দীর্ঘ ২০ বছর পর
ফেল করা বিষয় দুটিতে আবার পরীক্ষা দেওয়ার পর ফলাফল প্রকাশ
করার পর দেখা গেছে
তিনি এবার কৃতিত্বের সাথে দশম শ্রেণী পাশ করেছেন। পূর্বে তার ফেল করা বিজ্ঞান ও সমাজ বিজ্ঞান
বিষয়ে তিনি এবার ভাল নম্বর পেয়েছেন। শিক্ষামন্ত্রীর
পরীক্ষা দেওয়ার এই বিষয়টি পদচেরির
সাধারণ মানুষের মাঝে ব্যাপক কৌতূহলের সৃষ্টি করেছে।
কোন মন্তব্য নেই