Header Ads

মুসলমানদের গর্ব : ইরান ও আহমেদিনেজাদ

বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে পরাক্রমশালী শাসক মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট। এরপর যদি আপনাকে বলা হয় দ্বিতীয় পরাক্রমশালী শাসকের নাম বলতে, আপনি কার নাম বলবেন? একেক জন একেক জনের নাম বলতে পারেন। তবে আমি বলবো ইরানি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আহমেদিনেজাদ এর নাম। শ্রেষ্ঠ পরাক্রমশালী কোনও শাসক যখন  অন্য কোনও শাসকের ভয়ে তটস্থ থাকেন তখন অবশ্যই তিনিই হবেন দ্বিতীয় পরাক্রমশালী শাসক। বিশ্বের প্রত্যেক দেশেই আছে একজন প্রেসিডেন্ট বা সরকার প্রধান।

তবে সরকার প্রধানগুলো সবাই দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, বিলাসিতা, অর্থলোভী সহ নানান দোষে দুষ্ট। তবে বিশ্বের সকল শাসকদের মধ্য থেকে ব্যতিক্রম একজন শাসক হচ্ছেন ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আহমেদিনেজাদ। যিনি তার শাসনকার্য এবং তার ব্যক্তিগত জীবন পরিচালনা করেন বিশ্বনেতা মোহাম্মদ (সাঃ) এবং তার খলিফাদের রাষ্ট্র এবং জীবন পরিচালনার নিয়ম অনুসরণ করে।  সৎ, সাহসী, পরিশ্রমী, দূরদর্শী নেতা হিসেবে সারা বিশ্বেই আহমেদিনেজাদ আজ সমাদৃত। তার মতো সৎ, সাহসী, পরিশ্রমী শাসক বর্তমান সময়ের পৃথিবীতে আর একটিও খুঁজে পাওয়া যাবে না।

আধুনিক বিশ্বের অন্যতম ক্ষমতাশালী এই প্রেসিডেন্টের বাবা ছিলেন একজন সামান্য কামার। কামারের ছেলে প্রেসিডেন্ট হওয়ার পরও তিনি নিজেকে অর্থলোভী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেন নি। আহমেদিনেজাদ পেশায় একজন পি এস ডি ধারী তুখোড় সিভিল ইঞ্জিনিয়ার। এছাড়াও তিনি ছিলেন তেহরান ইউনিভার্সিটি অফ সায়েন্স এন্ড টেকনোলজির অধ্যাপক, রাজধানী তেহরানের মেয়র এবং ইরান রেভলুশনারি গার্ড এর প্রধান। ১৯৭৯ সালে ইরানের যে হাজার হাজার ছাত্র আমেরিকান দূতাবাস আক্রমণ করে ৫৩ জন কূটনীতিক কে বন্দী করে আহমেদিনেজাদ ছিলেন তাদের মধ্যে একজন।

তার জীবনযাপন চলাফেরার মধ্যে খুঁজে পাওয়া যায় আল্লাহ তার রাসূলের নির্দেশিত পথের স্পষ্ট ছাপ। একটি উন্নত রাষ্ট্রের রাষ্ট্রপ্রধান হয়েও তিনি যে সৎ জীবন যাপন করেন সেটা বর্তমান বিশ্বে বিরল। তার জীবন যাপন বিশ্বের অন্যান্য রাষ্ট্র প্রধানদের জন্য বিশেষ করে মুসলমান রাষ্ট্র প্রধানদের জন্য অবশ্যই অনুকরণীয় হতে পারে। আসুন আমরা তার জীবন যাপনের কিছু চিত্র পর্যবেক্ষণ করি।

জ্ঞান, বিজ্ঞান, শিক্ষা, প্রযুক্তি, শিল্প-সংস্কৃতি, গবেষণা, অর্থনীতি, খেলাধুলা সব দিক থেকে ইরান আজ বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর তালিকায় স্থান করে নিয়েছে। দেশের উন্নয়নে তার দূরদর্শী চিন্তাভাবনা ইরানকে আজ অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে গেছে। অথচ আপনি ভাবলে অবাক হবেন ,এই ক্ষমতাশালী লোকটি যখন তেহরান শহরের মেয়র ছিলেন তখন প্রতিদিন নিজ হাতে রাস্তা ঝাড়ু দিতেন।


এই লোকটি প্রেসিডেন্ট হবার পরও বিলাসবহুল কোনও বাড়ি গ্রহণ করেননি। তিনি আজও দুই রুমের একটা ছোট্ট বাড়িতে বসবাস করেন। তার বাসায় কয়েকটা কাঠের চেয়ার ছাড়া আরা কোনও আসবাবপত্র নেই। তিনি একজন প্রেসিডেন্ট তারপরও আজোও  ঘরের মেঝেতে একটা কার্পেটের উপর বালিশ বিছিয়ে ঘুমান। তার বাসায় শোয়ার জন্য কোনও খাট নেই। কারণ, তিনি মনে করেন খাট ব্যবহার করলে সেটি তাকে আরাম প্রিয় করে তুলবে।

আপনি শুনলে হয়তো অবাক হবেন, এই লোকটি প্রেসিডেন্ট থাকা অবস্থায় যখন তার ছেলে মাহাদিকে বিয়ে দেন তখন সেই বিয়েতে মাত্র ৪৫ জন অতিথিকে নিমন্ত্রণ করেছিলেন। যার মধ্যে ছিল ২৫ জন নারী ২০ জন পুরুষ। তাকে যখন NBC নিউজ চ্যানেলের সাংবাদিক এর কারণ জিজ্ঞাসা করেছিলেন তখন তিনি অত্যন্ত হাসিমুখে বিনয়ের সাথে বলেছিলেন, “এর চাইতে বেশি মানুষকে দাওয়াত দেওয়ার মতো সামর্থ্য আমার নেই ভাবুন, পৃথিবীর একটা উন্নত দেশের প্রেসিডেন্ট বলছে এই কথা! মাত্র ৪৫ জনকে বিয়েতে দাওয়াত দেওয়ার পরও সেই বিয়ের অনুষ্ঠানে কোনও ভোজের ব্যবস্থা ছিলনা। প্রত্যেক অতিথিকে খেতে দেওয়া হয়েছিল একটি কমলা, একটি কলা, একটি আপেল আর ছোট্ট এক টুকরো কেক।

উচ্চপদস্থ লোকগন সাধারণত অফিসে যান দেরিতে কিন্তু আপনি ভাবলে অবাক হবেন, এই লোকটি সবার আগে সকাল টায় অফিসে যান। আজোও তিনি সকালে অফিসে বেরিয়ে যাওয়ার সময় নিজের স্ত্রীর হাতের বানানো সকালের ব্রেকফাস্ট এবং দুপুরের খাবার একটা ছোট্ট কালো ব্যাগে করে সাথে নিয়ে যান। অফিসে পৌঁছে কার্পেটের মেঝেতে বসে তৃপ্তির সাথে সবার সামনে তিনি তার খাবার খান।

দিনের একটা উল্লেখযোগ্য সময় তিনি বাসার দারোয়ান, পথচারী সাধারণ মানুষের সাথে কথা বলে কাটান এবং তাদের সাথে সুখ-দুঃখ শেয়ার করেন। তিনি যখন কোন মন্ত্রীকে তার অফিসে ডাকেন তাকে একটা মন্ত্রণালয় চালানোর দিকনির্দেশনা দিয়ে দেন। পাশাপাশি তিনি তাদের বলে দেন, রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে তাদের ব্যক্তিগত হিসাব নিকাশ তাদের নিকট আত্নীয় স্বজনের কার্যকলাপ কঠিন ভাবে মনিটর করা হচ্ছে। তিনি রাষ্ট্রের সকল পর্যায়ের কর্মকর্তা, কর্মচারীদের কাজের হিসাব সঠিকভাবে মূল্যায়ন করে থাকেন। তার প্রশাসন পৃথিবীর মধ্যে সবোর্চ্চ দুর্নীতি মুক্ত।

ভাবতে অবাক লাগে তিনি ইরানের সরকার প্রধান তারপরও ব্যক্তিগত সম্পত্তি বলতে তার আছে তেহরানের বস্তিতে অবস্থিত ছোট্ট একটি বাড়ি, যা ৪০ বছর আগে তিনি তার বাবার কাছ থেকে উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়েছিলেন। বাড়িটির নাম Peugeot 504. আপনি শুনলে অবাক হবেন তার ব্যাংক একাউন্টে বেতনের জমানো কিছু টাকা ছাড়া আর কোনও সম্পদ নেই। বেতন হিসেবে তিনি তেহরান ইউনিভার্সিটি থেকে মাত্র ২৫০ ইউ এস ডলার পান।

তিনি রাষ্ট্রের প্রধান অথচ রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য রাষ্ট্র থেকে তিনি কোনও টাকা নেন না। তিনি ইউনিভার্সিটি থেকে প্রাপ্ত বেতনের টাকা দিয়ে সংসার পরিচালনা করেন। BBC’ সাংবাদিক তাকে এই বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, “সকল সম্পত্তি হল রাষ্ট্রের আর আমি হলাম এই সম্পত্তির পাহারাদার


প্রেসিডেন্ট আহমেদিনেজাদ অত্যন্ত পরিশ্রমী। তিনি এত বেশি পরিশ্রম করেন যে, সারাদিন ঘণ্টার বেশি ঘুমানোর সময় পান না। তিনি প্রতিদিন সকাল টায় ফজরের নামায পড়ে কাজ শুরু করেন আর রাত টায় এশার নামায ব্যক্তিগত স্টাডি শেষ করে ঘুমাতে যান। এই লোকটি কখনও নামায বাদ দেন না। রাস্তায় থাকাকালে নামাযের সময় হলে তিনি রাস্তায় ছোট্ট কাপড় বিছিয়ে সেখানেই নামায আদায় করে নেন। রাষ্ট্রীয় সব বড় বড় নামাযের জামাতে তিনি সব সময় পিছনের সারিতে সাধারণ মানুষের সাথে বসতে ভালবাসেন। তিনি তার নিজের জীবন নিয়েও শঙ্কিত থাকে না। সেজন্য অধিকাংশ সময় সামরিক বাহিনী ছাড়াই তিনি চলাফেরা করেন। তিনি মনে করেন মহান আল্লাহ তার সর্বোত্তম দেহরক্ষী।

ইসলামী আইন প্রশাসন দ্বারা প্রেসিডেন্ট আহমেদিনেজাদ ইরানকে নিয়ে যাচ্ছেন উন্নতির চরম শিখরে। বর্তমান বিশ্বের মানুষ ধারনা করে ধর্ম পালন করার পাশাপাশি রাষ্ট্র পরিচালনা করা সম্ভব নয়। তারা মনে করেন ইসলাম আধুনিক সভ্যতার প্রধান অন্তরায়। কিন্তু ইরান সরকার প্রমাণ করেছেন ইসলামেই রয়েছে সকল আধুনিকতা এবং উন্নয়নের চাবিকাঠি। বর্তমান বিশ্বের শিক্ষিত জনগোষ্ঠী ধারনা করে ১৪০০ বছর আগে রাসূল (সাঃ) এর আনিত জীবন-বিধান বর্তমান সময়ে পুরাতন হয়ে গেছে, এই বিধান এখন আর বর্তমান বিশ্বের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। কিন্তু ইরান সরকার প্রমাণ করেছেন ইসলাম সর্বদা নবীন এবং যেকোনো যুগের সাথে তাল মেলাতে সর্বশ্রেষ্ঠ।

ইরানের বর্তমান চেহারা দেখলেই বোঝা যাবে যে তারা ইসলামকে আঁকড়ে ধরেও উন্নত বিশ্বের সাথে কতটা অগ্রসর হয়েছে। বর্তমান বিশ্বের মিডিয়া জগত অমুসলিমদের হাতে বন্দি সেজন্য আমরা ইরানের প্রকৃত খবর জানতে পারিনা, কিন্তু তাদের খবর সর্বদায় জ্ঞাত থাকে কাফির বিশ্ব। তারা জানে মুসলমানরা বাঘের জাতি আর এই বিশ্বে যদি কোনও মুসলমান জাতি বাঘের বেশে থেকে থাকে তাহলে সেটি হচ্ছে ইরান। তারা জানে তাদের প্রধান প্রতিপক্ষ হচ্ছে ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান। এই সকল কারণে তারা এখন ইরানকে পৃথিবীর মানচিত্র থেকে মুছে দেওয়ার জন্য বদ্ধপরিকর।

বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে পরাক্রমশালী সেই দেশ, যাদের আছে পারমানবিক অস্ত্র। এই অস্ত্র দিয়েই কাফির বিশ্ব মুসলমানদের চোখ রাঙ্গানি দিয়ে আসছে। কিন্তু মুসলমানরা কেন তাদের চোখ রাঙ্গানি শুনবে? আর এই কারণেই ইরান শুরু করেছে পারমানবিক অস্ত্র তৈরির কাজ। ইরানে বর্তমানে মোট ২০ হাজার পারমাণবিক বিজ্ঞানী আছে যার মধ্যে হাজার পারমানবিক বিজ্ঞানীই মহিলা। নিউক্লিয়ার সাইন্স হচ্ছে বিজ্ঞানের সবচাইতে কঠিন শাখা। মুসলমানরা সাধারণত এই বিজ্ঞানের ধারে-পাশে যায় না কিন্তু ইরানের মুসলমানরা ঠিকই এগিয়ে গিয়েছে এই কঠিন পথে।

যুক্তরাষ্ট্র, হংকং, ভারত, চীন সহ বিশ্বের বিভিন্ন অমুসলিম দেশ চলচ্চিত্র তৈরি করে বিশ্ব মাতাচ্ছে। মুসলমানরা কেন পিছিয়ে থাকবে এই বিভাগে? তারা কি ক্যামেরা চালাতে পারে না? মুসলমানরাও যে ক্যামেরা ধরতে পারে তার প্রমাণ দিচ্ছে ইরান। ইরানের প্রত্যেকটি ছবি এখন বলিউডকে পিছনে ফেলে হলিউডের সাথে টেক্কা দিচ্ছে। তাদের ছবি সাধারণত প্রচারণার অভাবে সারাবিশ্বে দেখা যায় না, কিন্তু চলচ্চিত্র বিশেষজ্ঞরা বলেন, ইরানের প্রতিটি ছবি অস্কার পাওয়ার যোগ্য। শুধুমাত্র মুসলিম বলে তাদের অস্কার দেওয়া হয়না। সংগীত জগতেও রয়েছে ইরানের শ্রেষ্ঠত্ব। তাদের সংগীত আরব বিশ্বে ব্যাপক জনপ্রিয়।

কোন মুসলিম দেশ কখনও মহাশূন্যে স্যাটেলাইট স্থাপন করবে সেটা কখনও কেউ কল্পনাও করতে পারেনি। মুসলমানরা ভাবতো এই কঠিন কাজগুলো তাদের দ্বারা সম্ভব নয়, অথচ ইরান একমাত্র মুসলিম দেশ যে মহাশূন্যে স্যাটেলাইট স্থাপন করেছে। আমেরিকার মত ইরানও এখন স্যাটেলাইটের মাধ্যমে সারা পৃথিবীকে দেখে। এতদিন বিশ্বের সকল মুসলিম দেশকে মার্কিনদের ড্রোন বিমানের ভয়ে মাথা নিচু করে থাকতে হতো কিন্তু সময় এসেছে এখন মুসলমানদের মাথা উঁচু করে বাঁচার। কারণ, সম্প্রতি ইরান আবিষ্কার করেছে অত্যাধুনিক ড্রোন বিমান যা মুসলমানদের ধারনা শক্তির অনেক বাইরে ছিল।

ইরান আবিষ্কার করেছে বিশ্বের সব চাইতে বিপদজনক জাহাজ বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র। উদ্ভাবন করছে সব অত্যাধুনিক মিসাইল। শিক্ষা-দীক্ষার ক্ষেত্রেও পিছিয়ে নেই এই দেশটি। ইরানের শিক্ষার হার বর্তমানে প্রায় ৮৫% এখানে আছে অনেক ভাল ভাল বিশ্ববিদ্যালয়। যুক্তরাষ্ট্র সহ বিশ্বের অনেক নামী-দামী দেশ থেকেও এখন ইরানে অনেক ছাত্র-ছাত্রী পড়তে আসে।

ইরান এখন পৃথিবীর এক বৃহৎ অর্থনীতি। যুক্তরাষ্ট্র বা জাতিসংঘ সহ সকল সংগঠন মিলেও তাদের প্রতি হাজারো অবরোধ জারি করার পরও ইরানকে অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল করতে পারছে না। কারণ, তাদের অর্থনীতি হালাল ইসলামী শরিয়াহ মোতাবেক পরিচালিত। আমেরিকার ক্যালিফোর্নিয়া ভার্সিটির অর্থনীতির এক অধ্যাপক সম্প্রতি বলেছেন, “ইরানের উপর পাশ্চাত্যের অবরোধ না থাকলে ইরান আগামী ১০ বছরে ইউরোপকে ফেলে দেবে ইরানের শহর-বন্দরগুলো উন্নতির দিক থেকে ইউরোপ বা আমেরিকার চেয়ে কোনও অংশে কম নয়। ইরান এখন বিশ্বের ২য় বৃহত্তম পেট্রোলিয়াম উৎপাদনকারী দেশ। তথ্য-প্রযুক্তি, জ্ঞান-বিজ্ঞান, শিল্প-সংস্কৃতি, ব্যবসা-বাণিজ্য সহ সকল বিভাগে ইরান আজ মুসলমানদের অহংকারের নাম।


যেকোনো দেশের উন্নতির জন্য এখন প্রধান শক্তি হচ্ছে বিদ্যুৎ। পারমাণবিক শক্তি কাজে লাগিয়ে ইরান এখন পর্যন্ত প্রায় ২০ হাজার মেগাবাইট বিদ্যুৎ উৎপাদন করেছে এবং সামনে আরও করতে যাচ্ছে। ইরান খাদ্যে স্বয়ং সম্পূর্ণ। তারা খাদ্য কৃষিতে এতটাই স্বয়ংসম্পূর্ণ যে তারা নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে প্রচুর পরিমাণ খাদ্যশস্য ইউরোপে রপ্তানি করে থাকে। ইরানের উন্নতির এমন উদাহরণ আরও রয়েছে। অনেক পাশ্চাত্যের বিজ্ঞানীরা মনে করেন ইরান এখন বিশ্বের সুপার পাওয়ার হবার শেষ প্রান্তে অবস্থান করছে। বিশ্বের মধ্যে ইরানই একমাত্র মুসলিম দেশ যারা বিশ্ব ফোরামে মুসলমানদের স্বার্থের কথা মাথা উচু করে প্রকাশ করে। তারাই একমাত্র মুসলমান দেশ যারা অন্যের হুমকিতে ভীত না হয়ে উল্টো হুমকি দিতে জানে।

ইরান একটি ইসলামী প্রজাতান্ত্রিক রাষ্ট্র। এখানে দুর্নীতি, চুরি, ডাকাতি, স্বজনপ্রীতি, মদ, গাজা, ধর্ষণ রাষ্ট্রীয়ভাবে নিষিদ্ধ। ইরান ইসলামী আইনানুযায়ী পরিচালিত হয়। বর্তমান আধুনিক সমাজ ব্যবস্থায় বুদ্ধিজীবী শ্রেণীর লোকেরা মনে করে ইসলামের আদর্শের মধ্যে থাকলে কোনও দেশ বা জাতি উন্নতি করতে পারেনা। এই ধরনের মতাদর্শ যারা বিশ্বাস করে থাকেন তাদের ধারনা ভুল প্রমাণিত করার ক্ষেত্রে ইরান একটি জ্বলন্ত প্রমাণ।

মুসলমানরা একসময় সারা বিশ্ব শাসন করতো। আজ মুসলমানরা নিজেদের মুসলমান বলে পরিচয় দিতে লজ্জা পায় কিন্তু এক সময় এই মুসলমানরাই ছিল সর্বোত্তম সম্মানের অধিকারী। জ্ঞান-বিজ্ঞান, শিল্প-সাহিত্য সহ সকল বিভাগে তারা ছিল শ্রেষ্ঠ। আর এটা সম্ভব হয়েছিল কারণ তারা তাদের সামগ্রিক জীবনে ইসলামকে ব্যবহার করতো। আমাদের মনে রাখা উচিত, মুসলিম বিজ্ঞানীরাই সর্বপ্রথম পদার্থ রসায়ন বিজ্ঞান আবিষ্কার করেছিল। বীজগণিত, জ্যামিতি সহ অঙ্কশাস্ত্র এসেছে মুসলমানদের কাছ থেকে। চিকিৎসাবিদ্যা, মহাকাশ বিদ্যা, চিত্রকলা, স্থাপত্যবিদ্যা সহ  সকল বিভাগে মুসলমানরা ছিল অগ্রগামী। মিশরে যখন রাস্তায় ইলেকট্রিক বাতি জ্বলতো তখন আমেরিকার মানুষ পাথর ঘষে ঘষে আগুন জ্বালাতো। এটাই ইতিহাস। স্বয়ং আমেরিকার ইতিহাসেও এটা লেখা আছে।

ইরাকে মুসলমানরা প্রতিষ্ঠা করেছিল বিশ্বের প্রথম আধুনিক সভ্যতা। পরে তাদের দেখে তৈরি হয়েছে বিশ্বের অন্যান্য সভ্যতাগুলো। অথচ আজ মুসলমানরা তাদের গর্বের সভ্যতাকে ভুলে গিয়ে পাশ্চাত্য সভ্যতার দিকে লোলুপ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। আজ মুসলমানরা ধর্মকে বাদ দিয়ে সমাজ রাষ্ট্র পরিচালনা করতে পছন্দ করে। সেজন্য তারা আজ দিন দিন পিছনের দিকে ধাবিত হচ্ছে। কাফির বিশ্ব এবং মুসলমান নামধারী কিছু শয়তান বিশ্বব্যাপী মুসলমানদের বুঝাচ্ছে ইসলাম পুরাতন হয়ে গেছে এটা বর্তমান আধুনিক সমাজে অযোগ্য। তাদের কথা শুনে ধর্ম থেকে দূরে সরে গিয়ে মুসলমানরা দিন দিন বিপথগামী হচ্ছে আর অমুসলিমদের সেবা দাসে পরিণত হচ্ছে। পক্ষান্তরে কাফির বিশ্ব উন্নতির চরম শিখরে আরোহণ করছে।

মুসলমানরা আজ ধর্ম থেকে দূরে গিয়ে জ্ঞান বিজ্ঞান চর্চা থেকে দূরে চলে গিয়েছে। তারা আজ ভোগ, বিলাস , সম্পদ, নারী আর পার্থিব সুখের পিছনে ছুটছে। আর কাফির বিশ্ব তাদের নিয়ে নাটক করছে। আর সেই নাটকের অভিনেতা আজকের মুসলমানরাই।

মুসলমানদের বিপর্যয়ের জন্য অন্যতম একটি প্রধান কারণ হচ্ছে ঐক্য হারিয়ে ফেলা। মুসলমানরা আজ শতধা বিভক্ত। মুসলমানরা কাফিরদেরকে যতটা না তাদের শত্রু  মনে করে তার চেয়ে তারা অন্য গোত্রের মুসলমানদের বেশী শত্রু  মনে করে এবং তাদের ঘৃণা করে। যেমন, এমন অনেক অবুঝ মুসলমান আছে যারা শিয়া মতের কারণে ইরানকে ঘৃণা করে, আবার অনেকে তাদের ধ্বংসও কামনা করে। কিন্তু তারা ভুলে গেছে যে, মুসলমানদের কোনও গোত্র বা সম্প্রদায় নেই। মুসলমান এক মুসলমানই। নির্দিষ্ট কোনও গোত্র বা বর্ণের লোক হওয়ার মাঝে কোনও কৃতিত্ব নেই।


মহান আল্লাহ তায়ালা শ্রেষ্ঠ জাতি হিসেবে মনোনীত করেছেন মুসলমানদেরকে। তবে তাদের মধ্যে কোনও গোত্রের সৃষ্টি করেননি। মোহাম্মদ (সাঃ) এর সময়েও মুসলমানদের মাঝে কোনও গোত্র বা পার্থক্য সৃষ্টি করা হয়নি। তিনি বলেছেন সকল মুসলমান সমান এবং সবাইকে একতাবদ্ধভাবে মালার মতো গেঁথে থাকতে বলেছেন। আল্লাহ তায়ালা সকল মুসলমানকে একটি একক জাতি হিসেবে বিচার করেন। তবে সত্যিই তিনি যদি মুসলমানদের মধ্যে কোনও একটি অংশকে প্রাধান্য দিয়ে থাকেন তবে সেই মুসলমানদেরকেই দিবেন যারা তার দ্বীনকে বিশ্বে বিজয়ী শক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত রেখেছে এবং শত কষ্টের পরও বাতিল শক্তির কাছে মাথা নত করেনি।

অবশ্যই আল্লাহ তায়ালা পছন্দ করবেন না সেই মুসলমানদেরকে যারা নিজেদেরকে শ্রেষ্ঠ হিসেবে জাহির করার পর অলসতায় গা ভাসিয়ে শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করছে এবং বাতিল শক্তিকে প্রভু মেনে নিয়ে তাদের গোলামী করছে।

৭টি মন্তব্য:

  1. মোহাম্মদ সালাহ উদ্দিন।১৮ নভেম্বর, ২০১১ এ ১০:৩৪ PM

    আপনি বার বার ইসলামী প্রজাতন্ত্র , ইসলামী প্রজাতন্ত্র কথাটি বলছেন কেন ? ইসলামে কোন প্রজাতন্ত্র নেই। প্রজাতন্ত্র হচ্ছে গনতন্ত্রের সমার্থক শব্দ। ইসলামী রাষ্ট্র বেবস্তা হচ্ছে ''খিলাফত রাষ্ট্র বেবস্তা'' কারণ প্রজা অর্থ জনগন তন্ত্র অর্থ আইন সুতরাং প্রজাতন্ত্র মানে ''জনগনের আইন'' ইসলামী রাষ্ট্র কখনো জনগনের আইন বাস্তবায়ন করেনা, বাস্তবায়ন করে কোরানের আইন। আর কোরআন হচ্ছে মুসলমানদের সংবিধান। আর আহামদিনেজাদ এর শাসন বেবস্তা একটি খিলাফা রাষ্ট্র শাসন বেবস্তারি ছক। আল্লাহ উনাকে সাহায্য করুক। আমিন।

    উত্তরমুছুন
  2. মো সালাহ উদ্দিন @ ইরান রাষ্ট্রটির সাংবিধানিক নাম Islamic Republic of Iran যার বাংলা অর্থ "ইসলামী প্রজাতন্ত্র"। সুতরাং ইরানকে ইসলামী প্রজাতন্ত্র লেখার মাঝে কোনও ভুল নেই। আপনি খিলাফত রাষ্ট্র ব্যবস্থার কথা বলেছেন, কিন্তু দুর্ভাগ্য হচ্ছে বর্তমান বিশ্বের কোনও দেশে ইসলামী খিলাফত ব্যবস্থা প্রচলিত নেই। খিলাফত গনতন্ত্রেরই একটি শাখা। কারণ ইসলামি রাষ্ট্রে খলিফা নির্বাচন করা হয় গনতান্ত্রিক মতামতের ভিত্তিতে। গনতন্ত্রে সর্বময় ক্ষমতা জনগনের বলে প্রচার করা হয় এটা মারাত্নক ভুল, কারণ সকল ক্ষমতা কেবল মহান আল্লাহর হাতে। তবে এটা ঠিক গনতন্ত্রে জনগনের মতামতকে প্রাধান্য দেয়া হয়।

    উত্তরমুছুন
  3. মুহতাসিম বিল্লাহ {সুমন} আগে আপনাকে জানাই লক্ষ কোটি ধন্যবাদ আপনার সুন্দর পোষ্ট করার জন্য।

    প্রেসিডেন্ট আহমাদিনেজাদের জীবন কাহিনী শুনে আমি অবাক হলাম।
    এই আধুনিক যুগে এখনো সত্‍ রাষ্ট্রপ্রধান থাকে আসলে কল্পনীয়।
    এই রকম শাসক আমাদের সব মুসলিম দেশে থাকলে আজ আমেরিকার অত্যাচার ইসরাঈলের দখলদারিত্ব মেনে নিতে হত না।

    একটা ভুল ধরছি আপনার সেটা হল ইরান শান্তিপুর্ন জ্বালানি তৈরির উদ্দেশে পরমানু শক্তি ব্যবহার করছে অস্ত্র তৈরির জন্য নয়।কিন্তু পশ্চিমা গোষ্টি দাবি করছে ইরান গোপনে পরমানু বোমা তৈরি করছে।অবশ্য ইরানের সর্বচ্চো ধর্মিও নেতা আয়তুল্লা উজমা খোমেনি বলেছেন ইসলামের দৃষ্টিতে পরমানু অস্ত্র তৈরি ব্যবহার সম্পুর্ন হারাম।
    কিন্তু আমি খুশি হতাম যদি ইরান পরমানু অস্ত্র তৈরির সিদ্ধান্ত নিত। অন্তত আমেরিকা ও তার মিত্ররা ইরানে হামলার বিষয়ে ভাববার আগে 100000000 বার পরমানু বোমার কথা স্বরন করতো। যেমন টি ভাবে উঃকোরিয়ার ক্ষেত্রে।
    ধন্যবাদ

    উত্তরমুছুন
  4. Md. Taleb আপনাকে অনেক ধন্যবাদ এরকম সুন্দর একটি মতামতের জন্য। আসলে আমরা মুসলমানরা আমাদের ঐতিহ্যকে আমরা নিজেরাই ধ্বংস করে দিচ্ছি। একমাত্র ইরান ছাড়া বিশ্বের বাকি সকল মুসলমান রাষ্ট্রগুলো মার্কিনদের সেবাদাসে পরিণত হয়েছে। শুধুমাত্র ইরানই একমাত্র ব্যতিক্রম। তারা প্রকৃত বাঘের বাচ্চার মতো শীর উচু করে দাড়িয়ে আছে। আল্লাহ তাদের সাহায্য করুন। আপনি ইরানের একটি ভুলের কথা বলেছেন, সে ক্ষেত্রে আপনাকে জানাতে পারি এই যে, আয়তুল্লা উজমা খোমেনি পরমানু অস্ত্র হারাম বলেছেন, কিন্তু তিনি কথা গুলো অনেক আগে বলেছিলেন। এবং তখন তিনি কোন পরিপ্রেক্ষিতে কথাগুলো বলেছিলেন সেটা আমাদের জানা নেই। তিনি একজন জ্ঞানী ব্যক্তি। তাই সে সম্পর্কে মন্তব্য করবো না।
    ইরানের পরমানু অস্ত্র সম্পর্কে আপনাকে জানিয়ে রাখি, ইরান এখন ৯-১২% ইউরোনিয়াম সমুদ্ধ করছে যেটা দ্বারা জ্বালানী তৈরি করা হয়। ইরান সম্প্রতি বলেছে মার্কিন, ব্রিটেন, ইসরাইল ইত্যাদি রাষ্ট্র সমূহ তাদের সকল পরমানু অস্ত্র ধ্বংস না করলে তারা ৪০-৬০% ইউরোনিয়াম সংগ্রহ করবে। আর এই পরিমাণ ইউরোনিয়াম পরমানু অস্ত্র তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। মার্কিনরা কখনই ইরানের কথায় পারমানবিক বোমা ধ্বংস করবে না সেটা ইরানও জানে, কিন্তু ইরান এই অজুহাতে ইউরোনিয়ামের বিস্তার বাড়াচ্ছে। অর্থাৎ তারা দ্রুত পারমানবিক বোমা বানাতে যাচ্ছে। ২০১৩ সালে তাদের কাজ শুরু হবে। ইরান মুখে বলছে তারা পরমানু জ্বালানী হিসেবে ব্যবহার করছে, কিন্তু তারা ইতোমধ্যে বোমা তৈরি করে ফেলেছে কিনা তারও কোনও প্রমাণ নেই। কারণ আপনি নিশ্চয়ই জানেন ইসলামে যুদ্ধ পরিকল্পনার অংশ হিসেবে মিথ্যা বলা জায়েজ। ধন্যবাদ।

    উত্তরমুছুন
  5. ভাইয়া, শিয়া সুন্নি দুই মতবাদের উতপত্তি কোথা থেকে। এই বিষয়ে একটা পোষ্ট দিন। এবং কোনটা সঠিক আর কোনটা বেঠিক বিস্তারিত লিখুন কষ্টকরে।

    ধন্যবাদ

    উত্তরমুছুন
  6. মুসলমানদের মাঝে বিভেদ সৃষ্টি করে এরকম কোনও বিষয়ে লিখতে আমি উত্‍সাহী নয়, তবে জনাব তালেব আপনার চাহিদার কথা ভেবে শিয়াদের উত্‍পত্তি সম্পর্কে আলোচনা করবো। ধন্যবাদ।

    উত্তরমুছুন
  7. onak thanks vhai...ato sundor ekta post dewoar jonno....onak thanks

    উত্তরমুছুন

Blogger দ্বারা পরিচালিত.