সাপ বারবার জিভ বের করে কেন?
পৃথিবীতে প্রাণী জগতের মধ্যে সাপ একটি অন্যতম। সাপ দেখে ভয় লাগে না এমন লোক খুঁজে পাওয়া সহজ নয়। যারা সাপ নিয়ে খেলা দেখায় তারাও কিন্তু সাপকে ভয়ের ঊর্ধ্বে রাখে না। বন-জঙ্গল, পাহাড়-পর্বত বিভিন্ন স্থানে সাপ বাস করে। আফ্রিকার জঙ্গলে প্রচুর পরিমাণে সাপ দেখতে পাওয়া যায়। সেখানের সাপ গুলো অতিশয় বিষাক্ত। যারা সাপকে স্বচক্ষে দেখেছেন বা টিভি পর্দায় দেখেছেন তারা একটা বিষয় নিশ্চয়ই খেয়াল করেছেন যে, সাপ শুয়ে থাকুক বা চলাফেরাই করুক সে বারবারই তার জিভটাকে মুখের বাইরে নিয়ে আসে আবার মুখের ভেতর ঢুকিয়ে নেয়।
মুখ হাঁ করা কিংবা বন্ধ করা যে কোনও অবস্থায়ই একই ব্যাপার চলতে থাকে। এর যেন কোনও বিরাম নেই। এখন প্রশ্ন সাপ কেন বারবার জিভ বাইরে বের করে।
সাপের জিভ সামনের দিকে চেরা কিন্তু পেছনে তা জোড়া লাগানো। জিভ লেগে থাকে মুখের মাঝখানে। জিভের গোঁড়ার দিকে পাতলা আবরণী দিয়ে ঘেরা। সাপের নিচের চোয়ালের সামনের দিকটা সামান্য চেরা। মুখ বন্ধ থাকলেও এই চেরা পথে সাপ জিভ বের করতে পারে। চলার সময়ে সাপ বারবারই জিভটাকে বের করে আনে, আবার ভেতরে ঢুকিয়ে নেয়। আর মাঝে মাঝে ডানে বায়ে ঘোরায়। খেপে গেলে সাপ জিভ খুবই দ্রুত বের করতে থাকে।
দেখে মনে হয় যেন থুথু ছিটাচ্ছে। প্রথম প্রথম জিভের চেরাঅংশ দুটি অনেকটা তফাতে থাকে। কিন্তু আস্তে আস্তে তারা কাছাকাছি এসে পড়ে। কামড়ানোর আগে জিভের নড়াচড়া অনেকটা কমে আসে। আর খাবার গেলার সময় জিভটা বাইরে থাকে। এ থেকে বোঝা যায় যে, খাবার ধরা বা সেটা গেলার ব্যাপারে জিভ খুব একটা দরকারি না। তাহলে প্রশ্ন জাগা খুবই স্বাভাবিক যে, সাপের জিভের কাজ কি? আর সাপ কেনই বা বারবার জিভ বাইরে বের করে?
বিজ্ঞানীরা সাপকে পরীক্ষা নিরীক্ষা করে প্রমাণ পেয়েছেন যে, সাপ জিভ দিয়ে শ্বাস-প্রশ্বাস নিয়ে থাকে। সাপ যখন শিকার ধরার জন্য ঘাপটি মেরে বসে থাকে তখন তার জিহ্বা কম নড়াচড়া করে, কারণ তখন তার শরীর স্থির থাকায় খুব বেশী জোরে শ্বাস-প্রশ্বাসের দরকার হয় না। আবার যখন সাপ ছোটাছুটি করে বা রাগান্বিত হয়ে কাউকে কামড়াতে যায় তখন তার প্রচুর শ্বাস-প্রশ্বাসের দরকার হয়, ফলে সে খুবই দ্রুত জিহ্বাকে নড়াচড়া বা ভিতর-বাহির করে। এছাড়া বিজ্ঞানীরা আরও প্রমাণ পেয়েছেন যে, মানুষের নাকে ঘ্রাণ গ্রন্থি থাকলেও সাপের নাকে কোনও ঘ্রাণ গ্রন্থি নেই।
অর্থাৎ সাপের নাকে গন্ধ শোঁকার কোনও ব্যবস্থা নেই। কিন্তু সাপ যে কোনও কিছুর গন্ধ পায় না, এমনও নয়। সাপের জিভই হলো সাপের ঘ্রাণ অঙ্গ। কারণ, তাদের ঘ্রাণ গ্রন্থি জিভে থাকে। সাপের জিভের চেরা অংশ কেটে বাদ দিয়ে বিজ্ঞানীরা দেখেছেন যে, সাপের ঘ্রাণশক্তি নষ্ট হয়ে যায়। সাপ জিভ দিয়ে বাইরে থেকে গন্ধ সৃষ্টিকারী অণুগুলো মুখের ভেতর নিয়ে যায়। মুখের ভেতরে টাকরায় ছোট ছিদ্র থাকে।
এই ছিদ্রকে ঘিরে অনেক সংবেদনশীল
ঘ্রাণ কোষ রয়েছে। সাপ জিভের ডগাটি ওই ছিদ্রের ভেতর সরাসরি ঢুকিয়ে দিয়ে ঘ্রাণ সংবেদনশীল কোষগুলোতে
ঘ্রাণের অণুগুলো পৌঁছে দেয়। ফলে সাপ নির্দিষ্ট
গন্ধ পায়। এইভাবে সাপ জিভ দিয়ে বাইরের গন্ধকে ভেতরে পৌছায়। আর এর ফলে সে চিনে নিতে পারে তার খাদ্য। তাই সাপকে বারবার জিহ্বা কে বাইরে বের করার দরকার পড়ে।
কোন মন্তব্য নেই