রক্ত রঞ্জিত ইরাকের গ্রিন জোন
ইরাকের গ্রিন জোন সবার কাছে একটি পরিচিত এলাকার নাম। পূর্বে এই স্থানটির নাম খুব একটা পরিচিত না থাকলেও সাবেক ইরাকের প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেনকে ক্ষমতাচ্যুত করতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক ইরাক আক্রমণের সময় থেকে এই স্থানটি সমধিক পরিচিত। ইরাকের গ্রিন জোন একটি সংরক্ষিত এলাকা। এই এলাকাটি খুব বিশাল একটি জায়গা নয়। ইরাক আক্রমণের সময় মার্কিন সৈন্যদের নির্যাতন, নিপীড়নের ও হত্যাযজ্ঞের কারণে এই জায়গাটি সংবাদ মাধ্যমে বারবার আলোচিত হয়েছে। আর এই কারণেই ইরাকের গ্রিন জোন সবার কাছে একটি পরিচিত এলাকা। এই এলাকাটি আজও স্মরণ করে আসছে যুক্তরাষ্ট্রের নির্মমতার স্মৃতি।
গ্রিন
জোন এলাকাটি ইরাকের রাজধানী বাগদাদে অবস্থিত। ইরাকের গ্রিন জোন একটি আন্তর্জাতিক অঞ্চলের নাম। গ্রিন জোনের আয়তন ১০ বর্গ কিলোমিটার
বা ৩.৯ বর্গ
মাইল। মূলত গ্রিন জোন হলো বৈদেশিক সরকারের কেন্দ্রীয় অঞ্চল। পূর্বে যেখানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্র প্রধানরা একত্রিত হয়ে মধ্যপ্রাচ্যের শান্তি, সমৃদ্ধি ও উন্নয়ন কল্পে
কী করা যায় বা কী করা
উচিত সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত
গ্রহণ করত। ২০০৩ সালের জুলাই মাসে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ এই অঞ্চলটিকে গ্রিন
জোন হিসেবে ঘোষণা করেন। বর্তমানে গ্রিন জোনে রয়েছে ৫০টিরও বেশি আধুনিক ভবন, মার্কিন সেনাবাহিনী থাকার জন্য আলাদা বাড়ি, দালানকোঠা ইত্যাদি। ইরাকের স্থানীয় জনগণ সহজে গ্রিন জোনে প্রবেশ করতে পারে না।
ইরাকের
রাষ্ট্রপ্রধান মাসে মাত্র দুইবার অনুমতি সাপেক্ষে গ্রিন জোনে প্রবেশ করতে পারত। গ্রিন জোনের পাশেই রয়েছে রেড জোন। যে জোনটি ইংল্যান্ডের
সৈন্য ও অন্যান্য উচ্চ
পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য সংরক্ষিত। ২০০৩ সালের আগে অর্থাৎ ইঙ্গ-মার্কিন যুদ্ধের আগে গ্রিন জোন ছিল ইরাকি সৈন্যদের প্রধান সদর দফতর। এটি শুধু সৈন্যদের বা সেনাবাহিনীর সদর
দফতরই নয়, বরং প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেনের বাথ পার্টির প্রশাসনিক কেন্দ্র। এখান থেকেই প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেন তার শাসনকার্য পরিচালনা করতেন।
তবে তখন এ অঞ্চলটির নাম ছিল 'কারাডাট মারিয়াম'। তৎকালীন সময়ে প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেনই ছিলেন এ অঞ্চলের সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী। ২০০৩ সালের পর এ গ্রিন জোনের সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী হন জর্জ ডব্লিউ বুশ। ইরাকের সঙ্গে মার্কিন বাহিনীর যুদ্ধের সময় মার্কিন সৈন্যরা গ্রিন জোন থেকেই সব অস্ত্রশস্ত্র সংগ্রহ ও ইরাকে বড় ধরনের হামলা করত। ইরাকের তেল সম্পদ দখলের জন্য মার্কিন সরকার খনিজ বিশেষজ্ঞদের পরামর্শে ২১৫টি এপার্টমেন্ট তৈরি করে গ্রিন জোনে।
ভয়ঙ্কর
হলেও সত্য যে, এ গ্রিন জোনেই
হাজার হাজার নিরীহ ইরাকিকে হত্যা করেছে মার্কিন বাহিনী। শত শত নারীকে
জোরপূর্বক ধর্ষণ করেছে তারা এই গ্রিন জোনেই।
মার্কিনদের বোমা ও বুলেটের শব্দে
সর্বদা তটস্থ থাকতো গ্রিন জোন এলাকাটি। গ্রিন জোনের নির্মমতা ও এখানের পাশবিকতার
কারণে ইরাক-মার্কিন যুদ্ধের সময় এই এলাকাটির নাম
সংবাদ মাধ্যমে সর্বাধিক প্রচারিত ছিল। গ্রিন জোনের পাশেই রয়েছে গ্রিন জোন ক্যাফে, গ্রিন জোন রিভার, গ্রিন জোন পার্ক ইত্যাদি নামকরা জায়গা। যে জায়গাগুলো নির্মাণ
করার মাধ্যমে গ্রিন জোনের সৌন্দর্য বহুগুণে বৃদ্ধি করেছে। ২০০৩ সালের পর অর্থাৎ ইঙ্গ-মার্কিন যুদ্ধের পরিসমাপ্তি ঘটার পর থেকে আজ
অবধি 'গ্রিন জোন' অঞ্চলটি ইরাক সরকারের প্রশাসনিক কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।
এই
অঞ্চলটি ইরাকের নিজস্ব এলাকা হওয়া সত্ত্বেও এখানে বেশীরভাগ সময় বিদেশীরা সময় কাটিয়ে এসেছে। শত শত মানুষের
রক্তে রঞ্জিত ইরাকের এই নিজস্ব এলাকা
গ্রিন জোন থেকেই মার্কিনরা ইরাকিদের উপর চালিয়েছে চরম নিষ্ঠুরতা। গ্রিন জোন এলাকাটি সুন্দর ও চাকচিক্যময় হলেও
এই এলাকাটি অবশ্যই ইরাকিদের পছন্দ নয়।
কোন মন্তব্য নেই