কুসংস্কার দেশে দেশে (পর্ব ১)
কুসংস্কার এমন একটি বিষয় যার কোনও ভিত্তি নেই। তারপরও এটি সাম্রাজ্য করছে বিশ্বব্যাপী। সেই আদিম যুগ থেকে এখন পর্যন্ত মানব সমাজে কুসংস্কার বাসা বেধে আছে শক্তভাবে। আজকাল আধুনিক সমাজে কুসংস্কারের প্রভাব কিছুটা হ্রাস পেলেও তা একেবারে শেষ হয়ে যায়নি। পৃথিবীর প্রতিটি দেশ বা সমাজে রয়েছে অসংখ্য কুসংস্কার। কিছু কিছু কুসংস্কারের কথা শুনলে হয়তো আপনি অবাক হবেন অথবা আপনার হাসি পাবে তারপরও এই ধরনের কুসংস্কারগুলো টিকে আছে বহাল তবিয়তে।
আধুনিক
সভ্যতা শুরু হবার পূর্বে বিশ্বব্যাপী কুসংস্কারের প্রভাব সবচেয়ে বেশী ছিল। সমাজ থেকে আরেক সমাজে এই কুসংস্কার গুলো
ডাল-পালা মেলেছে খুব দ্রুত। পুরুষের তুলনায় সাধারণত নারীরা বেশী কুসংস্কার বিশ্বাস করে থাকে। নানা দেশে রয়েছে নানান ধরনের কুসংস্কার এবং এই কুসংস্কারগুলো আবার
বিভিন্ন বিষয়কে কেন্দ্র করে সৃষ্ট। বিশ্বব্যাপী কুসংস্কারের বিষয়ে আসুন আমরা আজকে ১ম পর্বে কয়েকটি
কুসংস্কারের বিষয়ে জানার চেষ্টা করি।
কালো:
পশ্চিমা
সংস্কৃতিতে কালো একটা ঐতিহ্যগত রং যা শবযাত্রার
অনুষ্ঠানে ব্যবহৃত হয়। এটা যতোটা না মৃতের সম্মান
প্রদর্শনের জন্য ব্যবহার করা হয় তার চেয়েও
বেশি তার স্বীকৃতির জন্য ব্যবহার করা হয়। এটা রোমকদের সময় থেকে প্রচলিত হয়ে এসেছে। পূর্বে
অনেক দেশে কুসংস্কার হিসেবে প্রচলিত ছিল যে শয়তান নিজেই
কালো চামড়ার মানুষের ওপর ভর করে তার
কার্যসিদ্ধি করে। এখনো অনেক দেশে কৃষ্ণাঙ্গ মানুষকে দেখলে অনেকেই মুখ ফিরিয়ে নেয়, তারা মনে করে গোপনে একটা শয়তান তার সামনে ছদ্মবেশে উপস্থিত হয়েছে।
এটা
গেলো কালো রংয়ের নেতিবাচক কুসংস্কারের উদাহরণ, তবে কিছু দেশে এর ইতিবাচক কুসংস্কারও
ছিল। এক সময় এটাও
প্রচলিত ছিল যে একজন কালো
মানুষকে স্পর্শ করায় সৌভাগ্য আসে। এক সময়ে যাদুকরী
শয়তানীদের ঐতিহ্যগতভাবে চিত্রিত করা হতো সর্বপ্রকার কালোর দ্বারা, একটা কালো বিড়াল অথবা একটা দাঁড়কাকের সাথে ছিল তাদের বেশি পরিচিতি। বিশ্বাস করা হতো ভূতেরা কালো জাতীয় প্রাণী বেশি পছন্দ করে। সেজন্য ভুতেরা কালো বিড়াল, কুকুর অথবা কালো মোরগ বেশী পছন্দ করে।
আবার
কয়েকটি সমাজে বিপরীতভাবে কালো বিড়াল ও ভেড়াকে সৌভাগ্যের
প্রতীক হিসেবে বিবেচনা করা হতো। মেষপালকগণ তাদের পালের মধ্যে একটি কালো ভেড়া থাকাটাকে একটা মঙ্গলজনক মনে করতো এবং কালো একটা মেষ শাবক জন্ম নিলে তাকে ঘিরে একটা উৎসব পালন করতো। কালো রং নিয়ে আরেকটি
কুসংস্কার প্রচলিত ছিল যে, যদি একটা ভেড়ী শরৎকালে প্রথম কালো বাচ্চা প্রসব করে তাহলে মৃত্যু এবং দুর্ভাগ্য নিশ্চিত ভাবে এগিয়ে আসে।
রুটি:
রুটি পৃথিবীর বহু মানুষের প্রধান খাদ্য, যেহেতু রুটি অনেক সমাজের প্রধান খাদ্য সেহেতু এটিও জড়িত হয়ে পড়েছিল কুসংস্কারের সাথে । ইহুদী খৃষ্টানদের শস্যের ঈশ্বর বা শস্যের দেবতাকে গ্রামীণ সম্প্রদায়ের লোকেরা বেশি মূল্যায়ন করতো এবং পূজা করতো। এখনো পর্যন্ত রুটির একটা সুগভীর ধর্মীয় তাৎপর্য আছে। এখনো অনেক খৃষ্টান রুটিকে যীশুর নৈশ ভোজের অংশ মনে করে । অতিরিক্ত রুটির টুকরো ফেলে দেয়া এখনো অনেক লোকে পাপ বলে বিবেচনা করে।
রুটি
তৈরি করাকে ঘিরে বহুবিধ কুসংস্কার জড়িয়ে আছে বিশ্বব্যাপী। পৃথিবীর বহু এলাকায় ঋতুস্রাবী মহিলাদের ময়দার লেচি বা খামির স্পর্শ
করা নিষেধ, কারণ তাদের বিশ্বাস যে, ওরা যদি রুটিতে স্পর্শ করে তাহলে সেই রুটিটি ভাল ফুলবে না। রুটি বানানোর সময় যদি খামির ফেটে যায় তাহলে একটা শবযাত্রা আসন্ন বলে ধরে নিতে হবে, এটা ছিল ওয়েলস বাসীদের কুসংস্কার। হিয়ারফোর্ডশায়ারে পরামর্শ দেয়া হয়ে থাকে যে নারীরা যখন
রুটি তৈরির জন্য ময়দা মাখাতে থাকে তখন পুরুষ ছেলেরা জেনো তার কাছে না যায়, কারণ
তারা যদি ময়দা মাখা হাত দিয়ে কোনও ছেলের মুখে আঘাত করে তাহলে সে জীবনে কোনোদিনও
রুটি বানাতে পারবে না। তাদের প্রথা ছিল যে, খামির বা লেচি চুলোয়
দেবার পূর্বে তার উপর একটা ক্রস মার্ক দেয়া, যাতে শয়তানী শক্তির হাত থেকে রুটিটি রক্ষা পায়।
অনেক
সমাজে প্রচলিত ছিল যে, একজন লোক একাই রুটি তৈরির জন্য লেচি চুলোর মধ্যে দেবে। যদি দু’জনে ভাগ
করে একই কাজ করে তবে নির্ঘাত তারা ঝগড়া, মারামারি করবে। এই কাজে খুবই
খেয়াল রাখতে হবে যাতে একটা রুটিরও জেনো উপরের সাইড নিচে না যায় অথবা
রুটি জেনো চুলোর ওপর থেকে টপকে পড়ে না যায়, যদি
এমন হয় যার অর্থ
হবে এই ঘরে একজন
লোক মারা যাবে। স্কটল্যান্ড বাসীদের কুসংস্কার ছিল রুটি চুলোয় থাকা অবস্থায় কোনও রকম গান গাওয়া চলবে না এবং মৃতদেহ
ঘরে থাকা অবস্থায়ও রুটি তৈরি করা যাবে না। তাদের আরও একটি প্রথা ছিল যে, রুটি চুলোয় থাকা অবস্থায় অন্য একটি রুটি চাকু দ্বারা কাটা যাবে না। যদি কাটে তাহলে বিপদ আসন্ন।
জন্মদাগ:
মানুষের
জন্মদাগ সম্পর্কে দেশে দেশে কিছু কুসংস্কার রয়েছে। সাধারণত শিশুদের জন্মদাগ দেখে বলা হয়ে থাকে যে মায়ের গর্ভধারণ
করা অবস্থায় শিশুটির কোনও খারাপ বাতাস লেগেছে বা সে কোনও
দু:খ পেয়েছে ।
কোনও কোনও সংস্কৃতিতে জন্মদাগকে সৌভাগ্য বলে বিবেচনা করা হয়ে থাকে, বলা হয় এটা ঈশ্বরের
চিহ্ন। আর একই সময়ে
অন্য সংস্কৃতিতে সেটাকে শয়তানের প্ররোচনা বলেও ধরা হতো। পূর্বে মায়েদেরকে পরামর্শ দেয়া হতো যে, তারা জেনো শিশুদের উপর কালো গোল মরিচের গুঁড়ো ছিটিয়ে দিয়ে তাদের শিশুদের খারাপ চেহারা হবার হাত থেকে রক্ষা করে।
কোনও
কোনও জায়গায় এটা বিশ্বাস করা হয় যে, মা
যদি তার জিহ্বা দ্বারা জন্মের প্রথম সপ্তাহটি শিশুর জন্মদাগ নিয়মিত চাটতে পারে তাহলে শিশুটির জন্মদাগ সেরে যাবে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যদি কোনও শিশু মাথায় দুটি জন্মদাগ নিয়ে জন্মায় তাহলে আশা করা হয়, সে পৃথিবীতে ব্যাপকভাবে
ভ্রমণ করবে এবং তার জীবন দুটি মহাদেশের মধ্যে বিভক্ত হয়ে অতিবাহিত হবে।
ষাঁড়:
ষাঁড়ের
বিরাট শক্তি সামর্থ্য অনেক কুসংস্কারকে অনুপ্রাণিত করছে এবং সুরক্ষা শক্তির মূলকে জাগ্রত করেছে। বলা হয়ে থাকে যে ষাঁড় বজ্রপাতের
আঘাত থেকে সুরক্ষিত এবং এই জন্য বজ্রপাতের
সময় একটা ষাঁড়ের খোঁয়াড়ে আশ্রয় গ্রহণ করা নিরাপদ। পূর্বে বিশ্বাস করা হতো যে, ষাঁড়ের ধমনীতে একটা সুচ গেঁথে সেটাকে চিমনীর কাছে রাখলে তা ডাইনীদের তাড়িয়ে
দিতে সক্ষম হয়। সম্ভবত প্রাচীনকালে ষাঁড়দের
প্রতি ধর্মীয় ভক্তির ফলে সপ্তদশ শতাব্দীর ডাইনীরা দাবী করতো যে, শয়তান ষাঁড়ের আকৃতিতে তাদের ক্ষুদ্র বক্ষের মধ্যে উপস্থিত হতো। প্রেম সম্পর্কীয় ব্যাপারে ষাঁড়ের অণ্ডকোষ দ্বারা তৈরি খাবারের থালাকে সবচেয়ে মধুর হিসেবে ধারনা করা হতো। আজও মধ্যপ্রাচ্যের অনেক দেশে বিশ্বাস করা হয় যে, ষাঁড়,
উট বা ঘোড়র অণ্ডকোষ
শক্তিশালী ওষুধ। যা যৌন কার্যকারিতাকে
বাড়িয়ে তোলে।
ভ্রমর বা মৌমাছি:
একটি
ভ্রমর ঘরের মধ্যে উড়তে দেখা গেলে তার অনেক অর্থ হতে পারে। অনেকে দাবী করেন এটা একটা নিশ্চিত ইঙ্গিত দেয় যে, একজন দর্শক আগত প্রায়। অন্য সমাজে বলা হয় এটা অমঙ্গলের
প্রতি ইঙ্গিত করে এবং এটা একটা মৃত্যুর আলামত। স্কটল্যান্ডে বলা হয় শরৎকালে প্রথম
ভ্রমরটি দেখা মাত্রই মেরে এটা সুরক্ষা করতে হবে তাতে ঘরের মালিক সব সময়ই সৌভাগ্যবান
থাকবে এবং কখনো দু:খ দৈন্যতা
তাকে গ্রাস করবে না।
গাজর:
বহু
দেশেই গাজরকে তার উপাদান ও গুণাগুণের জন্য
মূল্যায়ন করা হয়ে থাকে। অনেক দেশের মানুষের মাঝে ধারণা এই যে, গাজর
খেলে মানুষের চেহারা ভালো দেখতে হয়। তবে অবশ্যই এটা সত্যি যে, গাজর মানুষের শরীরে ভিটামিন ‘এ’ তৈরিতে সাহায্য
করে। এটা চোখের দৃষ্টি বাড়ায়, এজমা, গেঁটে বাত ও পিত্তের পাথর
এর চিকিৎসায় সহায়তা করে। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের সময় মিত্রবাহিনীর প্রচারকার্য অনুসারে পাইলটগণ রাত্রিকালীন আক্রমণে শত্রুদের ওপর বেশি প্রাধান্য বিস্তার করতে পারতো, কারণ তাদেরকে নিয়মিতভাবে গাজর খাওয়ানো হতো ।
কফিন বা শবাধার:
ইউরোপীয়
প্রথায় এটা হুঁশিয়ার করে বলা হয় যে একটা
শবাধারের মধ্যে যদি কেউ গিয়ে শোয় সেটা হবে তার জন্য চরম উদাসীন কাজ। এছাড়া কোনও শবকে কোনও জীবিত মানুষের কাপড় পরিহিত অবস্থায় শবাধারে রাখা যাবে না, কারণ যখনই সে কাপড়গুলো গলে
পচে যাবে তখন সাথে সাথে সেই লোকটির শরীরও ভেঙ্গে পড়বে। বাংলাদেশে প্রচলিত আছে যে, মৃতকে কবর দেওয়ার সময় কেউ যদি কবরে পড়ে যায় তাহলে বুঝতে হবে তারও কবরে যাওয়ার সময় ঘনিয়ে আসছে।
বিড়াল:
অতিপ্রাকৃত
শক্তি ধারণকারী প্রাণীদের মধ্যে বিড়ালই মধ্যবর্তী স্থান দখল করে আছে। যার ফলশ্রুতিতে পৃথিবীর সর্বত্রই বিড়াল অনেক মূল্যবান কুসংস্কারগুলোর সাথে জড়িত হয়ে আছে। প্রাচীন মিশর বাসীরা বিড়ালকে ঐশ্বরিক সম্মান প্রদর্শন করতো এবং কোনও অবস্থাতেই তারা একটা বিড়ালকে মারতও না বা হত্যা
করতো না, যদি কেউ বিড়াল হত্যা করতো তবে তারও শাস্তি ছিল মৃত্যুদণ্ড। ঘরের মানুষ সবাই একটা বিড়ালের মৃত্যুকে নিয়ে শোক প্রকাশ করতো এবং মৃতদেহটিকে মাটি দেয়া হতো যথেষ্ট উৎসব পালন করার মধ্য দিয়ে। প্রাচীন মিশরীয় কুসংস্কার ছিল যে, তারা বিশ্বাস করতো একটা বিড়ালের নয়টি জীবন থাকে।
পরবর্তী শতাব্দীগুলোতে সর্বত্র ইউরোপ ব্যাপী বিড়াল জাদুকরদের সাথে খুবই ঘনিষ্ঠভাবে জড়িয়ে পড়েছিল। এমনকি আজ পর্যন্ত কোনও ঐতিহ্যবাহী ডাইনীর বর্ণনা তার কালো বিড়ালটি ছাড়া হয় না। বলা হয়ে থাকে যাদুকরীরা প্রায়ই নিজেদেরকে কালো বিড়ালের আকারে পরিবর্তন করে ফেলে। এই ধরনের বিড়ালেরা তাদের গৃহিণীদের রক্ত খেয়ে বেঁচে থাকে বলে দোষারোপ করা হয়। এক সময় অনেক লোকেই বিশ্বাস করতো যে, মে মাসে বিড়াল ছানা জন্মালে তা হবে বিশেষভাবেই মৃত্যুর সাথে জড়িত এবং যাদুকরী ডাইনীদের কাজের সাথে সংশ্লিষ্ট, সুতরাং জন্মের সাথে সাথে তাদেরকে পানিতে ডুবিয়ে মেরে ফেলতে হবে।
একটি
বিড়ালের উপস্থিতিতে তারা পারিবারিক বিষয় নিয়ে আলোচনা করতেও অনীহা প্রকাশ করতো, জেনো সেটা পরিচিত একটি ডাইনী অথবা এমনকি গোপনে উপস্থিত একজন ডাইনী। পূর্ব ইউরোপে বিড়ালের গায়ে প্রায়ই আড়াআড়ি দাগ দিয়ে রাখা হতো যাতে তারা ডাইনীতে রূপান্তরিত হতে না পারে। আর
তখন ফ্রান্সে ডাইনীতে রূপান্তরিত হবার সম্ভাবনা আছে এরূপ বিড়ালকে প্রায়ই খাঁচায় বন্দী করে পুড়িয়ে মারা হতো।
সবচেয়ে
তাৎপর্যপূর্ণ ছিল ঐ বিড়ালটি যেটি
ছিল সম্পূর্ণ কালো। যদি একটি কালো বিড়াল কোনও লোকের যাত্রা পথের সামনে দিয়ে আড়াআড়িভাবে হেঁটে যেত তবে বিশ্বাস করা হতো এই ঘটনা তার
জন্য সৌভাগ্য এনে দেবে এবং সে যে আশা
করবে তা পূর্ণ হবে।
কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, স্পেন ও বেলজিয়ামে এর
বিপরীতটা ভাবা হতো, তাদের মতে সাদা এবং ধূসর রঙের বিড়ালই বেশি পছন্দনীয়, তাদের মতে কালো বিড়ালই শুধু মাত্র দুর্ভাগ্য বয়ে আনে। এই বিশ্বাসের বিকল্প
মতাবলম্বীরা যাই হোক এই মত প্রকাশ
করে যে, যদি একটি কালো বিড়াল পেছন ফিরে যায় অথবা পেছন দিক থেকে তাকে দেখা হয় তাহলে তা
প্রকৃতপক্ষেই একটা অমঙ্গলের চিহ্ন হতে পারে।
তৎসত্ত্বেও
একটা কালো বিড়ালের প্রতীক সৌভাগ্যের অগ্রদূত হিসেবে অন্তত ব্রিটিশ দ্বীপপুঞ্জে সর্বব্যাপী স্বীকৃত। সেখানে একটা কালো বিড়ালকে ছুঁয়ে দেয়াও সৌভাগ্যের। সমস্ত ইউরোপ ব্যাপী সাদা বিড়ালকে ব্যাপকভাবে অবিশ্বাস করা হয়। আর সেই সময়ে
দলছাড়া কচ্ছপের খোলার মতো বিড়ালকে ঘরে অত্যন্ত বেশি করে অপ্রত্যাশিত মনে করা হয়, কারণ লোকে ভয় করে এটা
সাথে করে মন্দ ভাগ্য নিয়ে আসে। তাদের আরও বিশ্বাস এই যে, কখনোই
বিড়ালকে টাকা দিয়ে ঘরে কিনে আনতে নেই, যদিও বা কেউ দুর্ঘটনাক্রমে
একটা কিনে ঘরে আনে তবে সেটা কখনোই ভালো ইঁদুর ধরা হবে না।
পূর্বে
বিশ্বাস করা হতো যদি বিড়াল হাঁচি দেয় তার অর্থ অবশ্যই বৃষ্টি আসবে, কিন্তু যদি বিড়ালটি একসাথে তিনবার হাঁচি না দেয় তার
অর্থ সমস্ত পরিবারের লোকেরা ঠাণ্ডায় ভুগবে। যদি কোনও বিড়াল আগুনের দিকে পেছন দিয়ে বসে তার অর্থ সে জানে একটা
ঝড় অথবা একটা ঠাণ্ডা আবহাওয়া আগত প্রায়। আর যদি একটি
বিড়াল একটি টেবিলের পা আঁচড়ায় তা
অতি সত্ত্বর আবহাওয়ায় একটা পরিবর্তন এর বিপদ সংকেত
দেয়।
বিড়াল
যখন নিজেদের ধৌত করে অথবা পরিত্যক্ত জিনিস নিয়ে আমোদ প্রমোদ খেলা করে তখন বুঝতে হবে যে জলীয় আবহাওয়া
আসন্ন। কিন্তু তারা যদি এই কাজের জন্য
দরজাটা বেছে নেয়, তাহলে সেটাকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কোনও কোনও স্থানে একজন ধর্মযাজকের গৃহে উপস্থিতির নিশ্চিত ইঙ্গিত বলেই ধরে নেয়া হয়। যদি একটি বিড়াল তার মুখের বাম পাশের কানের ওপর পর্যন্ত ধুতে থাকে তার অর্থ হবে একজন মহিলার গর্ভে সন্তান আসার পথে রয়েছে, যদি সে ডান কানের
ওপর ধোয় তাহলে বুঝতে হবে মহিলার গর্ভে পুরুষ সন্তান আসবে।
সদ্য
বিবাহিত দম্পতির কাছে কনের পাশ ঘেঁষে যদি একটি বিড়াল উপস্থিত হয়, তা হবে মঙ্গলের,
কিন্তু বিড়ালটি যদি কোনও মৃতদেহের ওপর দিয়ে লাফিয়ে পার হয় তাহলে তাকে
অবশ্যই ধরে মেরে ফেলতে হবে। কারণ মনে করা হয় এতে মৃতের
আত্মা নরকে যাবে। আগে বিশ্বাস করা হতো বিড়ালকে লাথি মারলে তার গেঁটে বাত হবার সম্ভাবনা আছে। লোকদেরকে আরও হুঁশিয়ার করে দেয়া হতো, তারা জেনো একটা বিড়ালকে তাদের শিশুদের বিছানায় শুতে না দেয়, কারণ
বিড়াল তাদের শ্বাসকে চুষে নিয়ে তাকে মেরে ফেলতে পারে।
গণ
ওষধিতে উপদেশ দেয়া হয় যে, মে
মাসে চোখের ওপর দিয়ে আড়াআড়িভাবে একটা বিড়ালের লেজ টেনে নিলে ফুলে ওঠা টিউমার এবং আঁচিল সেরে যায়, নাকের ছিদ্রের মধ্যে একটা বিড়ালের লেজ চেপে প্রবেশ করিয়ে দিলে নাক থেকে রক্ত পড়া ভাল হয়ে যায় এবং দাঁতের ব্যথা ভালো করার জন্য শুকনো বিড়ালের চামড়া মুখের ওপর চেপে ধরতে হয়। আগেকার দিনে কঠিন আঘাত ও ক্ষত চিকিৎসার
জন্য বলা হতো যে আস্ত একটা
বিড়াল জলপাই এর তেলে সিদ্ধ
করে তার থেকে মলম বানিয়ে লাগাতে।
মার্কিন
যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণাঞ্চলে কালো বিড়ালকে অল্প জ্বালে সেদ্ধ করে ঝোল তৈরি করে ক্ষয় রোগ ভালো করার জন্য গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছিল। পরিবারের অন্যান্য রোগব্যাধি ভালো করার জন্য বলা হতো রোগীকে গোসল দিয়ে সেই গোসলের পানি ধরে রেখে সেগুলো একটা বিড়ালের উপর দিয়ে বাইরে ছুঁড়ে ফেলে দিতে হবে। তাহলে পানি যেভাবে চলে যাবে তার সাথে ঘরের সব রোগ, বালা-মুছিবৎও দূর হয়ে যাবে। বাংলাদেশে অনেকে বিশ্বাস করে যে, বাসর রাত্রিতে বিড়াল মারতে হয় তাহলে বর
তার স্ত্রীর অনুগত থাকে।
পূর্বে
খনি শ্রমিকেরা বিড়াল শব্দটি উচ্চারণ করত না যতক্ষণ পর্যন্ত
তারা খনির মধ্যে থাকতো এবং যদি একটা বিড়ালকে নিচে খনির মধ্যে দেখা যায় এবং থাকতে দেয়া হয় তাহলে তারা
কাজ করতে অস্বীকার করতো।
নাবিক
ও জেলেরা যদিও তারা একটা সৌভাগ্য প্রদানকারী কালো বিড়ালকে তাদের নৌযানে করে নিয়ে যেতে পছন্দ করতো, কিন্তু বিড়ালটির ডেকের ওপরের মিউমিউ ডাকটি অপছন্দ করতো, কারণ তাদের বিশ্বাস ছিল এটা আসলে একটা দু:সময়ের আভাস
বহন করে। আর যদি একটি
বিড়াল উত্তেজিত ভাবে খেলা করে তাহলে সেটা দ্বারা বুঝতে হবে যে একটা মধ্যম
ধরনের ঝড় আসন্ন।
যদি
জাহাজের বিড়ালটি জাহাজের বাইরে ফেলে দেয়া হয় অথবা তার
সাথে অন্য কোনও প্রকার নিষ্ঠুর আচরণ করা হয় তাহলে যারা
এরূপ করবে তাদের উপর অতিশীঘ্রই একটা ভয়াবহ ঝড় এসে তাদের
সাজা দেবে। একটা বিড়ালকে কাপবোর্ডের মধ্যে আটক করে রাখা অথবা একটা পাত্রের নিচে ঢেকে রাখা হলে এটা ব্যাপকভাবে বিশ্বাস করা হয় যে, তাহলে
একটা প্রবল বায়ুপ্রবাহ হবে। সমুদ্রগামী নাবিকদের স্ত্রীরা প্রায়ই ঘরে কালো বিড়াল রাখতো, যাতে তাদের সমুদ্রে অবস্থানরত স্বামীদের সৌভাগ্য বজায় থাকে বা তারা সুরক্ষিত
থাকে।
কুসংস্কার
বিশ্বের প্রত্যেক দেশ দেশে বা সমাজের রন্ধ্রে
রন্ধ্রে ঢুকে আছে। কিছু কুসংস্কার দূরিভূত হচ্ছে আবার অনেক সময় নতুন নতুন কুসংস্কারের তৈরি হচ্ছে। আগামী পর্বে আমরা আরোও কিছু কুসংস্কার সম্পর্কে জানার চেষ্টা করবো।
এরকম
আরও পড়ুন:
কোন মন্তব্য নেই