এপ্রিল ফুল ডে এর অজানা সত্য ইতিহাস
বর্তমানে বিশ্বব্যাপী দিবস পালন একটি বিলাসিতা হয়ে দাঁড়িয়েছে। দেশী-বিদেশী মিলে প্রত্যেকদিন একটি না একটি দিবস লেগেই থাকে। দিবসের সংখ্যা দিন দিন এমনভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে যে, ভবিষ্যতে হয়তো দেখা যাবে একেক দিন দু-চারটি দিবস পালন হতে দেখা যাচ্ছে। এমন অনেক দিবস দেখা যায় যেগুলো অপ্রয়োজনীয় ও নিরর্থক। আবার এমন কিছু দিবস আছে যে গুলো কোনও ধর্ম, জাতি বা সম্প্রদায়কে হেয় করার জন্য পালন করা হয়। তারপরও দিবস থেকে নেই, আরও নতুন নতুন দিবসের সূত্রপাত করা হচ্ছে। তাতে মানবতার কোনও উন্নতি হোক বা না হোক এই দিবসগুলো পালন করার পিছনে হাজার হাজার টাকা ব্যয় করা হচ্ছে। তেমনই একটি দিবস এপ্রিল ফুল ডে। মুসলমানদের লজ্জা দেওয়া ও ইসলামকে হেয় করার জন্য মূলত এই দিবসটি প্রতি বছর পালন করা হয়।
৭১২ সালে তারিক বিন জিয়াদ কর্তৃক স্পেন জয় করার পর সমগ্র ইউরোপে খুব দ্রুত ইসলাম ধর্মের বিকাশ লাভ করতে থাকে। যেটি সহ্য করতে পারছিল না খ্রিষ্টান শাসকগোষ্ঠী। তারা ইসলামকে ইউরোপ থেকে চিরতরে নির্বাসনে দেওয়ার জন্য নানা চক্রান্ত শুরু করে। যার সর্বশেষ পরিণতি ছিল গ্রানাডা ট্রাজেডি। ১৪৯২ সালে গ্রানাডা ট্রাজেডি সংঘটিত হয় স্পেনের গ্রানাডায়। খ্রিষ্টানগণ তখন ইসলামের বিরুদ্ধে ক্রুসেড বা ধর্ম যুদ্ধের ডাক দিয়েছিল। ক্রুশের নামে তারা শপথ নিয়ে যুদ্ধে নেমে ছিল তাই এটাকে বলা হয় ক্রুসেড। যার মূলনীতি ছিল পৃথিবীর বুক থেকে ইসলামের নাম নিশানা চিরতরে মুছে ফেলা।
স্পেন তখন মুসলমানদের শাসনে ছিল। তখন স্পেনের শাসক ছিলেন বাদশাহ হাসান। আবু আব্দুল্লাহ ছিল বাদশাহ হাসানের ছেলে। খ্রিষ্টানগণ হাসানের বিরুদ্ধে তার পুত্র আবু আব্দুল্লাহকে দিয়ে বিদ্রোহ করায় এই প্ররোচনা দিয়ে যে, যদি তোমার বাবাকে ক্ষমতাচ্যুত করতে পারো তবে তোমাকে ক্ষমতায় বসানো হবে। খ্রিস্টানদের চক্রান্তে পা দিয়ে পিতার বিরুদ্ধে আবু আব্দুল্লাহ বিদ্রোহ করলে বাদশাহ হাসান ক্ষমতা ছেড়ে পলায়ন করেন। আবু আব্দুল্লাহ ক্ষমতা গ্রহণ করার পর পরই শুরু হয় স্পেনের মুসলমানদের পতন। আবু আব্দুল্লাহর দুর্বল নেতৃত্ব, অধার্মিকতা ও খারাপ নৈতিকতা লক্ষ করে রাজা ফার্ডিন্যান্ড ও রানী ইসাবেলা মুসলমানদের শায়েস্তা করতে যৌথ বাহিনী নিয়ে স্পেন আক্রমণ করে।
আবু আব্দুল্লাহ আক্রমণ নিয়ে আলোচনার জন্য দরবারে বিশেষ সভার আয়োজন করেন। ফার্ডিন্যান্ড আবু আব্দুল্লাহকে আশ্বাস দিয়ে ছিল যে, তারা যদি বিনা যুদ্ধে আত্মসমর্পণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে তাহলে তাদের জীবন দান করা হবে। দুর্বল রাজা ও তার সভাসদগণ অতীতের চুক্তিভঙ্গের রেকর্ড ভুলে গিয়ে ফার্ডিন্যান্ডের সেনাবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। অনেক সাহসী সৈনিক আত্মসমর্পণের পরিবর্তে লড়াই করে শাহাদাত বরন করলেও অন্য সকলে গ্লানিকর আত্মসমর্পণের পথ বেছে নেয়। ফলে সহজেই ফার্ডিন্যান্ড গ্রানাডার রাজপথ সহ সমগ্র শহর দখল করে নেয়।
২৪শে নভেম্বর ১৪৯১ তারিখ থেকে ফার্ডিন্যান্ড ও রানী ইসাবেলার বাহিনী শুরু করে চরম নৃশংস ও বর্বর হত্যাযজ্ঞ, লুণ্ঠন ও ধর্ষণ। এসব অত্যাচারের মাত্রা সীমা অতিক্রম করলে স্পেনের অনেক মুসলিম স্থানে মুসলমানরা বিদ্রোহ করে। ফার্ডিন্যান্ড ও রানী ইসাবেলা বিদ্রোহী এসব লোকজনকে হত্যা করার পাশাপাশি সমগ্র স্পেন তথা ইউরোপ থেকে মুসলমানদের উৎখাত করার জন্য ইতিহাসের চরম এক নৃশংস কুট কৌশল গ্রহণ করে। ফার্ডিন্যান্ড ও ইসাবেলার বাহিনী ঘোষণা করে, মসজিদ শান্তির ঘর, যারা শান্তি চায় তারা যেন সবাই মসজিদে গিয়ে আশ্রয় গ্রহণ করে।
একটু শান্তির আশায় সরল বিশ্বাসে, ইচ্ছায় অনিচ্ছায় হাজার হাজার মুসলিম নগরীর মসজিদ সমূহে আশ্রয় গ্রহণ করেছিল। তখনও এসব মানুষ জানতোনা কত নিষ্ঠুর এক খেলা অপেক্ষা করছে তাদের জন্য! ১ এপ্রিল ১৮৯২ তারিখে মসজিদ গুলোতে মুসলমান নর-নারী ও শিশুরা নামাজ পড়ে যখন আল্লাহর কাছে প্রার্থনারত তখন রাতের আঁধারে ফার্ডিন্যান্ডের বাহিনী শহরের মসজিদ সমূহ ঘেরাও করে তাতে আগুন জ্বালিয়ে দেয়। মুহূর্তের মধ্যে শহরের সকল মসজিদগুলো দাউ দাউ আগুনে জ্বলে উঠে এবং যারা একটু শান্তির আশায় মসজিদের ভিতরে প্রবেশ করেছিল সেই সকল হাজার হাজার নিরপরাধ মুসলমান পুড়ে অঙ্গার হয়ে গিয়েছিল।
দাউ দাউ করা আগুন, মুসলমান নারী-পুরুষের আর্ত চিৎকার আর ফার্ডিন্যান্ড-ইসাবেলার হাসি একাকার হয়ে গিয়েছিল সেদিন ইউরোপের আকাশে-বাতাসে। যে ইউরোপে মুসলমানরা বিজয়ী শক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত ছিল এক রাতের পার্থক্যে সেই ইউরোপ থেকে ইসলাম উৎখাত হয়ে গিয়েছিল এমনকি এখনও পর্যন্ত সেই ইউরোপে ইসলাম আর বিজয়ী হতে পারেনি। পরে স্পেনের পুড়ে যাওয়া সেই সুদৃশ্য মসজিদ গুলোকে গির্জা ও জাদুঘরে রূপান্তরিত করা হয়।
মুসলমানরা সেদিন প্রতিবাদ না করে ফার্ডিন্যান্ডের কথা শুনে সরল বিশ্বাসে বোকার মত মসজিদে গিয়ে বসে থাকা এবং নির্মমভাবে খ্রিষ্টানদের হাতে নিহত ও পরাজিত হওয়ার কারণে খ্রিষ্টানরা পরবর্তীতে মুসলমানদের বোকা বলে আখ্যায়িত করতো। এই ঘটনা এপ্রিল মাসের ১ তারিখ হওয়ার কারণে এবং মুসলমানদের লজ্জা দেওয়ার জন্য বিশ্বব্যাপী ১ এপ্রিল তারিখ April Fool Day (এপ্রিলের বোকা) দিবস পালন করা হয়।
এপ্রিল ফুল ডে’র ইতিহাস সম্পর্কে আরও কিছু মতামত আছে, তবে সেই ইতিহাসগুলো দুর্বল প্রমাণ বহন করে। যেগুলোর মধ্যে আছে, ফ্রেঞ্চরা ১৫০৮ সাল এবং ডাচরা ১৫৩৯ সাল থেকে এপ্রিল মাসের প্রথম দিনকে কৌতুকের দিন বা বন্ধুদের উপহার প্রদানের দিন হিসেবে পালন করা শুরু করেছিল। ফ্রান্সই হলো প্রথম দেশ যে দেশে সরকারীভাবে নবম চার্লস ১৫৬৪ সালে এক ফরমানের মাধ্যমে ১ জানুয়ারিকে নববর্ষ হিসেবে ঘোষণা করেছিলেন ।
নতুন এই নিয়ম চালু হবার ফলে ১ এপ্রিলে বন্ধু-বান্ধবদের উপহার দেয়া নেয়ার প্রথাটিও বদল হয়ে চলে যায় ১ জানুয়ারি বা নিউ ইয়ার উদযাপনের দিনটিতে। কিন্তু অনেকেই এই পরিবর্তনকে মেনে নিতে না পেরে ১ এপ্রিলেই তাদের পুরনো প্রথাসমূহ চালিয়ে যেতে থাকে। কিন্তু বিপরীত ১ জানুয়ারির পক্ষের লোকজন এদেরকে ফাকি দিতে ১ এপ্রিলে ভুয়া উপহার পাঠানোর কালচারটি চালু করে দেয়।
রোমান সম্রাট কনস্ট্যান্টাইনের (২৮৮-৩৩৭ খ্রি:) শাসনামলে হাসি-ঠাট্টা নিয়ে মেতে থাকে এমন একদল বোকা গোপাল ভাঁড়েরা সম্রাটকে কৌতুক করে বলেছিল, তারা রাজার চেয়ে ভাল ভাবে দেশ চালাতে পারবে। রাজা তাদের কথায় বেশ পুলকিত হয়ে রাজা গোপাল ভাঁড়দের সর্দার কুগেলকে একদিনের জন্য বাদশাহ বানিয়ে ক্ষমতা ছেড়ে দিয়েছিলেন। আর কুগেল সুযোগটাকে কাজে লাগিয়ে রাজ্যময় আইন জারি করে দিয়েছিল, প্রতিবছরের ১ এপ্রিল এইদিনে সবাই মিলে হাসি-তামাশা করবে। সেই থেকেই আজকের এপ্রিল ফুল ডে।
এপ্রিল ফুল দিবসের বিভিন্ন ইতিহাস থাকলেও গ্রানাডা ট্রাজেডির ইতিহাসটিকে সত্য হিসেবে গণ্য করা হয়। এপ্রিল ফুল দিবসটি বিশ্ব মুসলমানদের জন্য একটি চরম লজ্জার দিন। এই দিনটি মুসলমানদের লজ্জা দেওয়ার জন্য পালন করা হলেও অনেক মুসলমানও জেনে না জেনে বা জানা বোঝার পরও এই দিনটি পালন করে থাকে। যেটি খুবই লজ্জার। তবে একথা ঠিক যে, এই দিবসটি যে সকল মুসলমানরা পালন করে থাকে তারা নামে মুসলমান হলেও বাস্তবিক ভাবে তারা ইসলামের শত্রুদের অনুচর।
সকল মুসলমানকে এপ্রিল ফুলের সঠিক ইতিহাস জানা উচিৎ এবং এই সকল পাপিস্ট কাজ হতে বিরত থাকা উচিৎ। এছাড়াও এই দিনটিকে প্রতারণা ও ধোকা দেওয়ার দিবস হিসেবে পালন করা হয়। কিন্তু ইসলামে প্রতারণা বা ধোকা দেওয়া হারাম।
উত্তরমুছুন